প্রয়াত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের আত্মজীবনীমূলক বই ফাউন্টেনপেন। প্রথমে বইটি খণ্ড খণ্ড করে একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ পেলেও পরে অন্যপ্রকাশ বইটি ২০১১ সালের বইমেলায় খণ্ড গুলো একত্র করে প্রকাশ করে। সেখানেই তার জীবনের নানান ঘটনার পাশাপাশি উল্লেখ করেছেন বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির কথা। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকাই চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল তারকা বিদ্যা সিনহা মিমের কথাও।
বইটিতে মিমকে নিয়ে প্রয়াত এই সাহিত্যিক বলেন,
লাক্স সুন্দরীর নাম মীম।আমি ধরেই নিয়েছিলাম মেয়েটি মুসলমান।আলিফ লাম মীমের মীম থেকে তার নাম।
মেয়ের মা বললেন (গলা নামিয়ে)- স্যার আপনার মতো অনেকেই মনে করে আমরা মুসলমান।আসলে আমরা হিন্দু।মীমের আসল নাম বিদ্যা সিনহা সাহা।চ্যানেল আই এবং আমরা অনেক কায়দা করে তার আসল নাম গোপন রেখেছি।হিন্দু জানলে তো কেউ তাকে ভোট দিবেনা।
তাই নাকি?
-হ্যা স্যার।
তুমি কি সবাইকে এইসব কথা এখন বলে বেড়াচ্ছো?
-সবাইকে বলিনা স্যার। যারা আপন তাদের বলি।
আমি মীমের মায়ের সরলতায় মুগ্ধ হলাম।মীম তার মা'র মতো সরল না তবে জটিল ও না।
শিশুশিল্পীদের কাছ থেকে অভিনয় আদায়ের যে টেকনিক আমি তার ক্ষেত্রেও সেই টেকনিক ব্যবহার করলাম।যা করতে বলা হবে অবিকল তাই করতে হবে।ডানে তাকাতে বললে ডানে তাকাবে,বামে তাকাতে বললে বামে তাকাবে।
কয়েকবার রিহার্সেল করা হল।সে ঠিকমতো পারল।যখন ক্যামেরা চালু হলো তখন আর পারল না।আমি বললাম আবার যদি ভুল কর আছাড় দিয়ে ট্রেন লাইনে ফেলে দেবো।শুরু হল কান্নাকাটি। আমি বললাম চোখ মুছে শট দেবার জন্য তৈরি হও।
এবার মীমের কো আর্টিস্ট জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এগিয়ে এলেন। তিনি আমাকে বললেন-হুমায়ূন!মেয়েটা কান্নাকাটি করছে।তাকে আধাঘন্টা সময় দিন।সে নিজেকে compuse করুক।
আমি বললাম- না,আজ তাকে সময় দেওয়া হলে প্রতি শটেই তাকে সময় দিতে হবে।আজ যদি সে বের হয়ে আসে পরে আর সমস্যা হবেনা।
আমি শট নিলাম।মীম উতরে গেল।তাকে নিয়েই আমার সব টেনশন।অভিনয়ের কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই ছবির এত বড় এবং এত জটিল চরিত্রে কাজ করা কঠিন বিষয়।
দিনের শেষে আমি বলব,ছবি দেখে কেউ বলতে পারবেনা এটা মেয়েটার প্রথম কাজ।
'আমার আছে জল' ছবিতে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা সে কাজে লাগাতে পারে কি না তাও দেখার বিষয় আছে।যদি কাজে লাগাতে পারে তাহলে তার ভবিষ্যৎ ভালো।
তাকে ক্ষতি করেছে লাক্স সুন্দরী গ্রুমিং সেশন নামক কর্মকান্ড।তার মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে জীবনের সার কথা একটাই-নিজেকে সুন্দর দেখানো।সাজগোজেই সব।
মেকাপম্যান মেকাপ দিয়েছে সে চলে গেছে নিজের ঘরে।বাড়তি কিছু মেকাপ দেওয়া।আরো সুন্দর হবার চেষ্টা।
তাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি।একদিন তাকে ডেকে বললাম-আমেরিকায় সবচে' বেশি সাজগোজ করে বুড়িরা।ঠোটে রঙ,গালে রঙ,চুলে রঙ।তারপরই আসে মধ্যবয়ষ্করা।তোমার মতো বয়সী মেয়েরা কোন সাজসজ্জাই করেনা।তারা জানে বয়সের সৌন্দর্যই তার সুন্দর। তুমি যতই সাজবে তোমাকে ততই কৃত্রিম লাগবে। 'আমার আছে জল' এর দিলশাদের মধ্যে কোন কৃত্রিমতা নেই।সে জীবনের জটিলতা নিয়েই ব্যতিব্যস্ত। সে কিন্তু সাজতো না।বুঝেছ?
-বুঝেছি স্যার।
এরপর থেকে মেকাপম্যান যতটুকু মেকাপ দেবে তার বেশি কিছু করবেনা।
-ঠিক আছে স্যার।
বলেই সে ঘরে ঢুকে গেল। সারামুখে বাড়তি কিছু রঙচঙ দিতে,চোখ আঁকতে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন