প্রযোজক, পরিচালক, অভিনয়শিল্পীসহ চলচ্চিত্রের সকল শাখার মানুষদের বলা হয় একটা পরিবার। এখন সেই পরিবারে দেখা দিয়েছে বিভাজন। তৈরি হয়েছে সংকট। একটা সংকটের সমাধান হতে না হতেই আরেকটি সংকট এসে দাঁড়াচ্ছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। সমাধানের জন্য চেষ্টাও করা হচ্ছে। তবে ক্রমশ বেড়েই চলছে এই সংকট। বিশেষ করে আগামী ২৫শে অক্টোবর এফডিসিতে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকটি ঘটনা এরইমধ্যে ঘটেছে।
বর্তমানে নানা কথাবার্তা দিয়ে শিল্পীদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়িও চলছে। গত শুক্রবার সকালে সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় চিত্রনায়ক রিয়াজকে কথা বলতে না দেয়ায় সভা ত্যাগ করেন তিনি। সভা থেকে বেরিয়ে রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির গঠনতন্ত্রের কোন ধারায় আছে, সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক ছাড়া বর্তমান কমিটির কেউ কথা বলতে পারবেন না? এমন কোনো ধারা নেই। এ ঘটনার পর সমিতির সভাপতি পদে থাকা মিশা সওদাগর জবাবে বলেন, বার্ষিক সভায় সাধারণ শিল্পীরা প্রশ্ন করবেন, চলতি কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জবাব দেবেন। তাই রিয়াজকে কথা বলতে দেয়া হয় নাই। সে কথা বলবে কেন? রিয়াজ তো জবাবদিহিতার গ্রুপে পড়েছে। ভোটের আগে সমিতির সদস্য যোগ বিয়োগের বিষয়ে অস্বচ্ছতার কথা জানান চিত্রনায়ক ফেরদৌস। এদিকে এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদের প্রার্থী চলচ্চিত্রের প্রিয়দর্শিনী মৌসুমী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর বলেন, অনেক বড় চমক দিয়েই একটি প্যানেল প্রস্তুত করেছিলাম। কিন্তু কয়েক দিন ধরে একটি মহল আড়াল থেকে বাধা সৃষ্টি করে আসছিল। আমার সঙ্গে যারা ছিলেন, সবাইকে নির্বাচন না করতে প্রভাবিত করা হয়েছে। এমনকি আমাকেও সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এটা কাম্য নয়। এরপর অন্যায়ভাবে সদস্য পদ বাতিল করার অভিযোগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি বরাবর উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন ফাইট ডিরেক্টর মো. শেখ শামীম। তিনি বলেন, নব্বই দশক থেকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য আমি। অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছি। তখন থেকেই সমিতির নির্বাচনে নিয়মিত ভোট দিয়ে আসছি। কিন্তু ২০১৭ সালে যখন শিল্পী সমিতির চাঁদা দিতে যাই তখন জানতে পারি যে, আমার সদস্য পদ নেই। নতুন ভোটার তালিকায় অনেকের নাম নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তাই সম্প্রতি শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের নামে উকিল নোটিশ পাঠান তিনি। যদিও এই নোটিশ এখনো হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন সমিতির নেতারা। চলচ্চিত্রাঙ্গনের এমন অবস্থায় এক সময়ের প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নেতা ও সেন্সর বোর্ডের সাবেক সদস্য নাসিরউদ্দিন দিলু বলেন, অনেকদিন পর প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাচন হলো। নতুন নেতারা ভালো কাজ করার চেষ্টা করছেন। প্রযোজক পরিবেশক সমিতির এই সংকট কেটে উঠতে না উঠতেই চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে বেশ কিছু খবর জানলাম। এতে চলচ্চিত্রের সংকট বেড়েই চলেছে। নির্বাচনটা ফেয়ার হওয়া উচিত। সমস্যা বাড়তে না দেয়াটা ভালো। চলচ্চিত্রের সিনিয়র অভিনেতা ও নির্মাতা আলমগীর বলেন, শিল্পী সমিতির নির্বাচনে কোনো ঝুট-ঝামেলা যেন না হয়, সুন্দর মতো নির্বাচন হোক এটাই প্রত্যাশা করছি। এদিকে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রধান নির্বাচন কমিশনার চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমরা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছি। ঘোষিত সময়েই ভোট গ্রহণ হবে। তিনি প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। এদিকে প্রযোজক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমাদের চলচ্চিত্রের সময়টা এমনিতেই ভালো যাচ্ছে না। অশনি সংকেত বলা যায়। শিল্পী সমিতির আগের কমিটির মধ্যে জায়েদ খান ভালো কিছু কাজও করেছেন। আর প্রযোজক সমিতির নির্বাচন সুন্দরভাবে হয়েছে। তাই আমি চাই কাদা ছোড়াছুড়ি না করে শিল্পী সমিতির নির্বাচনটা সুন্দরভাবে হোক এবার। শিল্পী সমিতির সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বললে তারাও জানান, ঝামেলা না সকলে সুষ্ঠু নির্বাচন চান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন