স্বামী এবং স্ত্রীর মনোমালিন্য ঘটে বিভিন্ন কারণে। অনেক সময় সেটি ডিভোর্সের পর্যায়ে চলে যায়। যখন তাদের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্কটি আর সেই স্থানে থাকে না ফলে একে অন্যকে নিয়ে দোষারোপ শুরু করে দেয়। নারীদের চরিত্র নিয়ে রসালো গল্প বানিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সমাজে আবার পুরুষদের আর্থিক অক্ষমতা নিয়ে ছোট করা হয়।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট কথার অবতারণা করে অন্যের কাছে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টায় থাকে। এই দোষ ধরার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। দেশে আইন-আদালত আছে, সেই প্রক্রিয়ায় গিয়ে নিজেদের ঝামেলা মিটিয়ে ফেলাই ভালো। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সন্তানরা। তাদের বোঝানো যায় না যে, কেন তাদের বাবা-মা আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
তাই সন্তানদের খোলাখুলিভাবে বুঝিয়েই ডিভোর্সের প্রক্রিয়ায় যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এ ক্ষেত্রে পরিবারের অন্য মানুষগুলো সন্তানদের বোঝানোর দায়িত্বটা নিতে পারে। অনেক সময় ছোট বিষয়ে ভুল বোঝার কারণে অনেক বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। কারণ সন্তানরা বাবা-মায়ের ডিভোর্সের পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
নারীটিকে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই তার আর্থিক স্বাবলম্বীতার বিষয়ে ভাবতে হবে। কারণ ডিভোর্সের পর বাবার বাড়িতে ফিরে না যাওয়াই ভালো। কারণ সেখানে গেলে অবহেলার শিকার হতে হয়। আগের মতন সম্পর্ক বজায় থাকে না। যদি সন্তানটি ছোট হয় আর মায়ের সঙ্গে থাকে তখন সেই সন্তানটি বড় হয় মানসিক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে। ডিভোর্সের পর নারীটি যখন একা থাকে তখন আশপাশের মানুষ বিশেষ করে নারীরা তাকে নিয়ে নানান কটূক্তি করে। প্রথমেই প্রশ্ন তোলে আপনার স্বামী কোথায় থাকেন?
এ সমাজব্যবস্থা এখনো নারীদের একা থাকাকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখতে অভ্যস্ত নয়। সে কারণে একা কোনো নারী যখন চাকরি অথবা ব্যবসা করে তখন তাদের চক্ষুশূল হয়। ডিভোর্সের জন্য আত্মীয়স্বজনরা নারীটাকে দোষারোপ করতে থাকে কারণ বলে যে সে সংসারী নয়, তাই সমঝোতা করতে পারেনি। ডিভোর্সের পর নিজেকে অপরাধী ভাবার কিছুই নেই, কারণ ডিভোর্স একটি স্বাভাবিক ঘটনা, যেটি হওয়ার জন্য হয়তো কেউ প্রস্তুত থাকে না।
নিজের জগৎটাকে আপন করে সাজিয়ে নিতে হবে। যদি আপনি সৃজনশীলতার সঙ্গে যুক্ত থাকেন তা হলে বিভিন্ন সংগঠনের প্রোগ্রামগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। কোনো শখের কাজ করতে পারেন। আর চাকরিজীবী হলে তো কথাই নেই। তবে অফিসে আপনাকে নিয়ে নানান গল্প রটবে। সেগুলোতে কান না দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করবেন। প্রয়োজনে অফিসের পরিবেশ ভালো না লাগলে চাকরি পরিবর্তন করতে পারেন।
আর চাকরিজীবী না হলে কোনো ছোট ব্যবসা শুরু করতে পারেন। সেখানে অবশ্য পুঁজির দরকার হয়। বিভিন্ন সংস্থা নারী উদ্যোক্তাদের লোন দেয়, সেখানে খোঁজ নিন। সর্বোপরি নিজেকে পুনরায় ভুল পথে যাত্রা করার আগে সতর্ক হতে হবে। সমাজ নামক দুষ্ট চক্রের নষ্ট মানুষদের কথায় আপনি একটুও বিচলিত হবেন না। কারণ সমাজের মানুষ আপনাকে খাওয়ায় না। আপনার বিপদে এগিয়ে আসে না। বন্ধু আর আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন। অবহেলা, অসম্মান আর অশ্রদ্ধা থেকে বেরিয়ে এসে জীবনকে আপনার নিজের মতন উপভোগ করুন। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকুন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন