যেই হারে সিনেমার মহরত হয়, সেই হারে সিনেমা নির্মিত হলে সিনেমার সংকট থাকার কথা না। তাহলে এতো সিনেমা কোথায় যায়। দেখা গেছে অনেক সিনেমার দৌড় মহরত পর্যন্তই। অনেক সিনেমার মহরতে আড়ালে পাতা থাকে প্রতারণার ফাঁদ। কখনো এই সব ফাঁদে পড়ে ফাঁসছেন স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণীরা। আবার কখনো ফাঁসছেন নতুন প্রযোজক।
অনেক দিন থেকেই ভুয়া এসব ছবির মহরতকে ঘিরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। অভিযোগ আছে, রাজধানীর মগবাজারে কিছু রেকর্ডিং স্টুডিওতে অপেশাদার লোকজন প্রতারণার জন্য ছবির মহরত করছে। এই সব বিষয়ে সোচ্চার না হলে আরও ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলা সিনেমা। এমনই মনে করেন চলচ্চিত্রের মানুষরা।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘এখন দেখি ফেসবুক ভরা নায়ক নায়িকা। কয়দিন পরপর তাদের ছবির মহরতও হয়। অথচ তারা বেশির ভাগই অপরিচিত। তাদেরকে দেখেই অবাক লাগে। কথায় আছে, আগে দর্শনদারি, পরে গুণবিচারি। মহরতে কেক কাটা হয় তিন চার নায়িকা নিয়ে। মহরতের নামে প্রতারিত হয় তারা। নামেমাত্র প্রযোজকগুলো অসৎ উদ্দেশ্যে মেয়েগুলোকে ব্যবহার করছে মহরতের নামে।’
জায়েদ খান আরও বলেন, ‘ আজকাল দেখি আলু-পেঁয়াজের ব্যবসায়ী দুই-তিন লাখ টাকা দিয়ে নায়ক হয়ে যায়। আবার পতিতারা নায়িকা হয়ে যায়। এখন আলু পেঁয়াজ ব্যবসায়ী প্রযোজক আর দাম বাড়াতে পতিতা হচ্ছে নায়িকা। এইসব মহরতের ছবি আলোর মুখ দেখে না। আমি মনে করি, এইসব ছবির বিরুদ্ধে প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। এগুলো অপরাধ, যা প্রকাশ্যে করা হচ্ছে। এসব নায়ক-নায়িকার জন্য আমাদের শিল্পীদের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে, চলচ্চিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
ভুয়া প্রযোজক, ছবি ও নায়িকা প্রসঙ্গে নির্মতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক বলেন, ‘আমাদের এফডিসির সব মানুষই ভালো তা কিন্তু নয়, আমাদের মধ্যেও কিছু ঠকবাজ, অসাধু মানুষ রয়েছেন, যারা এই ছবিগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকেন। আমি মনে করি, এই মানুষগুলোকেও চিহ্নিত করা উচিত।’
‘প্রেমের তাজমহল’ খ্যাত পরিচালক গাজী মাহাবুব বলেন, ‘এখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাইলে কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয় না। স্বাধীনভাবে যার ইচ্ছা সেই ছবি নির্মাণ করা যায়। ভালোও হচ্ছে, আবার মগবাজারের মহরতের ছবির মতো খারাপ ছবি বা প্রতারণাও হচ্ছে। আমার মনে হয়, এখনই এসব প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।’
চলচ্চিত্রের নৃত্য পরিচালক মাসুম বাবুল বলেন, ‘আমার মনে হয় চলচ্চিত্র ডিজিটাল হওয়ার পর এটা শুরু হয়েছে। যখন ৩৫ মিলিমিটারে চলচ্চিত্র নির্মাণ হতো, তখন এমন হত না। তখন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাইলে এফডিসির সরকারি খাতায় নাম লেখাতে হত। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য জমা দিতে হতো। শুটিংয়ের তারিখ, লোকেশনসহ প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পী সমিতিতে, শিল্পী ও টেকনিশিয়ানদের নাম জমা দিতে হতো। এখন তো মগবাজারে একটি স্টুডিও দুই হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়ে মহরত করে ছবির ঘোষণা দিয়ে দিচ্ছে। যদিও বেশির ভাগ ছবি আলোর মুখ দেখে না, তবে যে দু-একটা ছবি মুক্তি পায়, সেগুলো আমাদের অবস্থান নষ্ট করে। আমি মনে করি, এই বিষয়টি সেন্সর বোর্ডের নজরে আনা প্রয়োজন।’
সেন্সর বোর্ডের সদস্য প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘আমি মনে করি, এই বিষয়গুলোও নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে আমি আবারও মিটিংয়ে কথা বলব। এই ছবিগুলোর বেশির ভাগই সেন্সর বোর্ড পর্যন্ত আসে না। কোনো সিনেমা হলে মুক্তিও পায় না। স্থানীয়ভাবে ডিশ চ্যানেলে প্রচার করে। আবার অনেকে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে চালিয়ে দেয়।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন