প্রায় এক দশকের অভিনয় ক্যারিয়ার মেহজাবিন চৌধুরীর। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে আলোর পাদপ্রদীপে আসা এই অভিনেত্রী এরই মধ্যে অভিনয় করেছেন অনেক নাটক, টেলিফিল্ম ও বিজ্ঞাপনে। তার ক্যারিয়ারে সঙ্গী হয়েছে বহুমাত্রিক সাফল্য। এ সময়টাতে নিজেকে কীভাবে ভেঙেছেন, গড়েছেন, ভবিষ্যতে কোথায় দেখতে চান, তা নিয়ে দীর্ঘ আলাপ করেছেন এই অভিনেত্রী।
৪ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর উত্তরার একটি বাড়িতে নাটকের শুটিংয়ের বিরতির সময় প্রিয়.কমের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে আলাপ। সেই আলাপচারিতা তুলে ধরা হলো পাঠকদের সামনে।
প্রিয়.কম: প্রায় এক দশকের অভিনয় ক্যারিয়ার। এ সময়ে অনেক দর্শক আপনার অভিনয় পছন্দ করেছে। একটা সময়ে গিয়ে দেখা গেল, জনপ্রিয়তার পারদ একটা ছকে বন্দী হয়ে গেছে। আমার ধারণা, আপনিও সেটা অনুভব করেন। সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন?
মেহজাবিন চৌধুরী: দেখেন একঘেঁয়ে কাজ হলে এটা আমার দোষ না; পুরোপুরি চিত্রনাট্যকারের দোষ। আপনি চিত্রনাট্যকারদের আগে জিজ্ঞেস করবেন এই প্রশ্ন। তারপর আমাকে। তারা যদি ভিন্ন ভিন্ন গল্প লিখেন, তাহলে আমরাও আলাদা গল্পে কাজ করতে পারব। চিত্রনাট্যকারের পরে এটাকে মনিটর করার দায়িত্ব হচ্ছে নির্মাতাদের।
আমি মনে করি প্রত্যেক নির্মাতার যেকোনো কাজ শুরু করার আগে দেখা উচিত ইন্ডাস্ট্রিতে কেমন কাজ হচ্ছে, কেমন কাজ আগে হয়ে গেছে। তারা যখন দেখবে যে, একই রকম গল্পে আগে মেহজাবিন অভিনয় করে ফেলছে, তখন আর সে ধরনের গল্প নিয়ে তারা কাজ করবে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কী, ওই ধরনের কাজের চর্চা খুব একটা হচ্ছে না।
দেখেন, চিত্রনাট্য লেখা তো আমার দায়িত্ব না। আমার দায়িত্ব শুধু ভালো অভিনয় করা। অভিনয় বাদ দিয়ে আমি তো চিত্রনাট্য লিখতে পারব না। আমি নির্মাতাকে বলতে পারব না যে, অন্য গল্প আনেন। তাহলে বলেন, প্রধান দোষটা কার ওপর যাচ্ছে? অবশ্যই চিত্রনাট্যকারের ওপর। তারা যখন গল্প লেখায় ভিন্নতা আনবেন, দর্শকরাও পর্দায় তখন আমাকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে দেখতে পাবে।
আমি কিন্তু ফেসবুকে দর্শকদের কমেন্টগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখি। দর্শকরা আমাকে আমার মতো করেই দেখতে চায়। এটা কিন্তু আমার অনেক দিনের কষ্টের অর্জন। যখন সবাই মিলে নতুন কিছু করতে চাইবে কিংবা চায়, সেখানে সবার আগে আমিই যাই কিংবা যাবও। কারণ সে উদ্যোগটিতে সবার আগে আমি থাকতে চাই, চাইব।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দর্শকরা আমাকে আবেগধর্মী নাটকে দেখতে পছন্দ করছে। আজ থেকে তিন/চার বছর আগে তারা কমেডি ড্রামা দেখতে পছন্দ করত। এই একেকটা সময় যায়। এখন তো রোমান্টিক গল্পের নাটকের সময় যাচ্ছে। তাই দর্শক আমাকে এভাবেই দেখতে চাচ্ছে, আবার পাচ্ছেও।
যখন, যেটা হচ্ছে আমি তো ওটার মধ্য দিয়েই যাব। আগামী বছর থেকে যদি ট্রেন্ড শুরু হয়ে যায় ভৌতিক গল্পের নাটকে বেশি কাজ হবে, তখন কিন্তু আমাকেও ভৌতিক গল্পের নাটকে কাজ করতে হবে। কারণ অভিনয় তো আমার পেশা।
প্রিয়.কম: ক্যারিয়ারের কাজের পরিসংখ্যান যদি বিবেচনা করা হয়, দেখা যায় চরিত্রগুলোর ভিন্নতা খুব একটা নেই। এ বিষয়ে আপনার মত কী?
মেহজাবিন চৌধুরী: আমার এ বছরের সেরা কাজের কথা যদি বলি, সেটা হচ্ছে ‘সোনালি ডানার চিল’। এরপরে ‘ফেরার পথ নেই’। বছরে একটা ডিফরেন্ট কাজ হবে, যেটার কথা সবাই বলবে। সবসময় ভালো কিছু তো হচ্ছে না, হবেও না। পুরো ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব তো আমার ওপর আসবে না। আমার দিক থেকে ভালো কাজ করার কিন্তু অনেক চেষ্টা থাকে। সেটা হয়তো আপনারাও বুঝতে পারেন।
আমি গত কয়েকদিন আগে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম-আমার এ বছরের কোন কাজগুলো আপনাদের (দর্শক) পছন্দ হয়েছে। ওখানে কিন্তু আমার সব রোমান্টিক নাটকের নামগুলোই এসেছে। ‘সোনালি ডানার চিল’-এর কমেন্ট আসছে হাতে গোনা আট-দশটা। তো এই ধরনের গল্পের দর্শক কোথায়? আমরা তাদের জন্য ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সেটার কি সঠিক সাড়া পেয়েছি? আমি যে এত এত কষ্ট করে শুটিং করলাম, সেটার সাড়াটা কোথায়?
প্রিয়.কম: আপনার অভিনয়ের প্রশংসা অনেকেই করে থাকেন। সমালোচক কারা?
মেহজাবিন চৌধুরী: অবশ্যই আমার দর্শক, যারা আমার কাজ দেখতে চায়। তারা কিন্তু এখন অনেক সচেতন; পাশাপাশি স্মার্টও। কোনো খুঁটিনাটি ভুল হলে, তারা কিন্তু সেটা ধরে ফেলে। পাশাপাশি গঠনমূলক সমালোচনাও করে। আমিও তাদের সে সমালোচনা খুব গুরুত্ব সহকারে নিই।
প্রিয়.কম: অনেকেই বলেন, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা জনপ্রিয়তা কিংবা কর্মজীবনে সাফল্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়জনদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কেও বদল আসে। আপনার ক্ষেত্রে...
মেহজাবিন চৌধুরী: আমার যারা কাছের, সবার সঙ্গেই যোগাযোগ আছে। তবে দেখা একটু কম হয়। কারণও তাদের জানা-পেশাগত ব্যস্ততা। আমি কিন্তু ব্যক্তিজীবনে আগে যেমন ছিলাম, এখনো কিন্তু তেমনই আছি। না বদলানোর কারণ জীবনটাকে সহজ করে দেখতে ও বুঝতে শেখা। এই আরকি।
কখনো নেগেটিভ কোনো কিছু ওয়ার্ক লাইফে দেখেননি মেহজাবিন। ছবি: শামছুল হক রিপন
প্রিয়.কম: জীবন তো তার গতিতেই চলছে, চলবেও। অনেকদিন ধরেই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত। নাম-যশ পেয়েছেন। এরপরও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবই একসময় অতীত হয়ে যায়। এ নিয়ে আপনার মধ্যে কোনো শঙ্কা কাজ করে?
মেহজাবিন চৌধুরী: প্রত্যেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর একটা টাইম পিরিয়ড থাকে, মানে পিক টাইম। এরপর অবশ্যই সে দিকটাতে কোনো না কোনোভাবে পরিবর্তন আসে। তারপর সে অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। আমার যখন মনে হবে আমি অনেকটা অভিনয় করে ফেলেছি, এর বাইরে আর কিছু করার নেই, তখন আমি অবশ্যই অন্য কাজ করব। তবে তখন যদি ভালো চিত্রনাট্য আমার কাছে আসে, অবশ্যই আমি সে কাজগুলো করব।
প্রিয়.কম: এক বাক্যে মেহজাবিনকে বর্ণনা করতে বললে কী বলবেন?
মেহজাবিন চৌধুরী: এই প্রশ্নটা আমাকে না করে, আমার সহ-শিল্পীদের করলে তারা ভালো বলতে পারবে। আমি আর কী বলব। যে দর্শক আমাকে ভালো করে ফলো করে থাকেন, তারা আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন, সেটা আমার জীবনযাপন থেকে শুরু করে সবকিছুই। না জানার মতো আসলে কিছু নাই। আমি কেমন, সেটা তো আমি বলতে পারব না; আমার সহশিল্পীরাই বলতে পারবেন।
প্রিয়.কম: মেহজাবিন চৌধুরীর সব সিক্রেট শেয়ার করার সঙ্গী কে?
মেহজাবিন চৌধুরী: আমার একটা ফ্রেন্ড আছে। ওর নাম হাসিন। ওর সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতে পারি। ও আমার খুব কাছের। কারণ দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। যেহেতু অনেক দিনের পরিচয়, ও আমাকে বুঝতে পারে। আমাকে ভালোভাবে চেনেও। আমি যদি কোনো বিষয়ে ওকে নাও বলি, ও অনেক কিছু বুঝে ফেলে। ও যেহেতু আমাকে এভাবে বুঝতে পারে, তাই আমিও ওর কাছে অনেক বিষয় সহজেই শেয়ার করতে পারি। আস্থার একটা জায়গা তৈরি হয়ে গেছে। যেকোনো বিষয় নিয়ে আমি কথা বলতে পারি।
প্রিয়.কম: এবার ব্যক্তিজীবন প্রসঙ্গ। নিজেকে ঠিক কতটা সময় দিতে পারেন?
মেহজাবিন চৌধুরী: আমি যথেষ্ট সময় পাই। কারণ আমার প্রত্যেকটা কাজের মধ্যে একটা বিরতি থাকে। আমি খুব কম সময়ই একটানা কাজ করি। আমি সপ্তাহে দুই দিন কোনো কাজ করি না। বছরে তিন-চার বার দেশের বাইরে ঘুরতে যাই; পরিবার নিয়ে। নিজেকে রিফ্রেশ করার সুযোগ পাই।
প্রিয়.কম: হলিউড থেকে বলিউড, এমনকি দেশীয় শোবিজে কাজ করতে এসে কুপ্রস্তাব পেয়েছেন বলে অনেকে দাবি করেছেন। আপনি কখনো এমন কিছুর সম্মুখীন হয়েছেন?
মেহজাবিন চৌধুরী: না, কখনোই সে রকম কোনো পরিস্থিতিতে পড়তে হয় নাই। আমার মনে হয়, আমি সবকিছু সহজেই পেয়ে গেছি। আমার প্রথম কাজ করানো হয়েছে, অনেক জোর করে। আমি কিন্তু কাজ করতে চাইনি। আল্লাহর রহমত সবসময় ছিল আমার প্রতি। কখনো নেগেটিভ কোনো কিছু ওয়ার্ক লাইফে দেখি নাই।
প্রিয়.কম: অনেকদিন ধরেই অভিনয় করছেন। আমাদের এখানে পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে বৈষম্য বা কর্মক্ষেত্রে হেনস্তার মতো বিষয়গুলো নিয়েও আপনার অবজারভেশন ঠিক কেমন?
মেহজাবিন চৌধুরী: পারিশ্রমিক বাড়লে তো ক্ষতি নাই। তবে আমি যতটকু ডিজার্ভ করি, সেটা করি, আমাকে ওই রেমুনারেশন দিয়েই সবাই নিচ্ছে। কে কী পাচ্ছে এই বিষয়ে তো কারো সঙ্গে আলাপ হয় না। তাই আমি এই ব্যাপারে জানি না। আমার দিকে থেকে বলতে পারব, আমার কোনো কমপ্লেইন নেই।
প্রিয়.কম: আপনি ক্যারিয়ারের বর্তমান অবস্থাকে কীভাবে দেখছেন?
মেহজাবিন চৌধুরী: আমি তো চেষ্টা করছি সঠিক পথে চলতে। আমি কিন্তু খুব ফোকাসড। আমার মনে হয়, আমি আমার জীবনে ক্যারিয়ার নিয়ে এত বেশি ফোকাসড কখনোই ছিলাম না। এখন যাই করছি না কেন, সেটা পরিকল্পনা করেই করছি। আমি যদি এটা ধরে রাখতে পারি, আরও ডেভলপমেন্ট হবে। এটা আমি জানি। আমার চোখ না সবসময় উপরে; আমি জয়া আহসানকে দেখি।
আমি তিশা (অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা) আপু, মম (অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম) আপুকে দেখি। আমি সবসময় মনে করি কী, আমি অনেক পিছিয়ে আছি। আর ভালোর তো শেষ নাই। যত আমার বয়স বাড়বে, ক্যারিয়ারের বয়স বাড়বে, আমি তো ভালো করব, খারাপ করব না। অভিজ্ঞতা তো অনেক বড় একটা বিষয়।
প্রিয়.কম: চরিত্রনির্ভর কাজের কথা যদি বলি, সে রকম উল্লেখযোগ্য কাজ কী আপনার ক্যারিয়ারে রয়েছে, যা সময়কে অতিক্রম করে যাবে, মানে চরিত্রটা সময়কে ছাপিয়ে যাবে?
মেহজাবিন চৌধুরী: আমি যদি এ বছরের কাজই ধরে বলি, অত পিছনে না যাই-‘ফেরার পথ নেই’,‘সোনালি ডানার চিল’-এ দুটো এ বছরের আমার সেরা কাজ। গত বছরেরও এমন দুটো কাজের কথা বলতে পারব। তার আগের বছরেরও দুটো কাজের কথা বলতে পারব। ভালো কাজের সংখ্যা আসলে কম। সবকিছুর পর একটা শিল্পীর একটা ভালো কাজ লাগে, যেটা সবকিছুর পরও সবার ভালো লাগবে।
প্রিয়.কম: কেউ কেউ মনে করেন গল্পে ভিন্নতা না থাকার যে দায় তার অনেকটা শিল্পীর ওপরও বর্তায়। তবে দর্শক ও নির্মাতা একজন শিল্পীকে যে রূপে দেখতে চায়, তার বাইরে গিয়ে শিল্পবোধের জায়গা থেকে কাজ করার দায়বদ্ধতা কি একজন শিল্পীর নেই?
মেহজাবিন চৌধুরী: আমি যদি এই বিষয়ে একটু কঠিন হই, তাহলে তো কোনো কাজই করতে পারব না। কারণ রোমান্টিক নাটক করতে গেলে ঘুরে-ফিরে কাছাকাছি বিষয়গুলোই চলে আসবে। সেখানে ভিন্নতা দেখানোর সুযোগও কম। কারণ প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে যখন প্রেম আসে, সেটা কিন্তু একই রকম আসে। যখন সে কথা বলবে, সে ফোনে বলবে, রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসবে, খাবে, বৃষ্টির মধ্যে ভিজবে। তবে হয়তো বা একেকজনের জীবনে সংকটের অধ্যায়টা একেক রকম থাকে।
আমরা যদি রোমান্টিক গল্পের নাটক বাদ দিয়ে চলে যাই থ্রিলার বা অ্যাকশন ঘরানার গল্পে, এই ধরনের কাজ বাংলাদেশে এখন কেউ ভালোমতো করতে পারছে? এখন আমি আমার জায়গা থেকে কী করতে পারব? আমি একটা বিষয়ই করতে পারব, কাজ না করে বসে থাকতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
মেহজাবিন তার ক্যারিয়ার নিয়ে এখন যতটা ফোকাসড সেটা এর আগে কখনোই ছিলেন না। ছবি: শামছুল হক রিপন
প্রিয়.কম: তবে এত এত গতানুগতিক কাজ হলে কি দর্শকদের দায় আছে সেগুলো দেখার? এ বিষয়টি নিয়ে....?
মেহজাবিন চৌধুরী: এত এত কিছুর পরও দর্শক কাজগুলো দেখছে, প্রশংসা করছে। আমি কিন্তু নেতিবাচক কিছু পাচ্ছি না। আমাকে অডিয়েন্স দেখেতেই চায় রোমান্টিক গল্পের নাটকে। আমি এর বাইরে গিয়ে যখনই কাজ করেছি, তারা খুব একটা পছন্দ করে না। এই যে প্রায় এক দশক ধরে কাজ করে একটা ইমেজ তৈরি করেছি, সেটা কিন্তু অনেক সময়ের ব্যাপার। আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করছি ভিন্ন ভিন্ন গল্পে কাজ করার।
আমি নিজেও চাচ্ছি এর থেকে বের হওয়ার জন্য। তবে এর জন্য তো দরকার খুব ভালো ভালো চিত্রনাট্য আর ভালো ভালো চিত্রনাট্যকারের, যেটার অনেক বেশি অভাব। চিত্রনাট্যকার, ডিরেকটর, অভিনেতা-অভিনেত্রী প্রত্যেকের কিন্তু আলাদা আলাদা দায়িত্ব আছে। সেটা যদি তারা যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে তাহলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে। যখন ভিন্ন ভিন্ন চিত্রনাট্য হবে, তখন কিন্তু ডিফরেন্ট মুডের কাজগুলো হবে।
আর তখনই একজন শিল্পী সাকসেসফুল হবে। মানে যে যেটা ভালো করতে পারবে, সেটার দিকে যদি মনোযোগৃযখন একটা মানুষ মাল্টিটাস্কিং (বহুমাত্রিক কাজ) শুরু করে দিবে, তখন কিন্তু সে আর ভালো কাজ করতে পারবে না।
প্রিয়.কম: বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যখন একজন শিল্পী ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করে, তখন সে কাউকে না কাউকে মেন্টর (পরামর্শক) মেনে সে পথ চলে, আপনার জীবনে সে মানুষটি কে?
মেহজাবিন চৌধুরী: আমি বলব, আমার প্রত্যেকটা কো-আর্টিস্ট। সে তালিকায় রয়েছেন অপূর্ব ভাই, সজল ভাই, আফরান নিশো ভাই। তারা আমাকে যে পরিমাণ গাইড করেছেন, সহযোগিতা করেছেন, আমি আসলে সেটা ভুলতে পারব না। একটা সময় আমি বাংলা পড়তে পারতাম না, সে সময় তারা আমাকে সামনে দাঁড়িয়ে চিত্রনাট্য পড়ে পড়ে শুনিয়েছেন। দীর্ঘ অভিনয় জীবনের কো-আর্টিস্টদের সহযোগিতার কারণেই আজ আমি এখানে।
প্রিয়.কম: তারকা জীবনের টপ টু বটম সবই সংবাদ। তেমনি নানান মাধ্যমে গুঞ্জন শোনা যায়, আপনাকে নিয়েও। শোনা যায়, ছোট পর্দার মেধাবী নির্মাতা আদনান আল রাজিব আপনার মেন্টর। এ বিষয়ে কী বলবেন?
মেহজাবিন চৌধুরী: আমার জীবনে বন্ধু কিন্তু অল্প কয়েকজন। আমি যদি শোবিজের মেয়ে বন্ধুদের কথা বলি, সেটা অভিনেত্রী হাসিন রওশন। ও এখন কাজ করে না। সে কিন্তু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার আরেকটা কাছের বন্ধু আছে; ওর নাম সিফাত তাহসিন। আমার আরেকটা বন্ধু আছে আয়মু। ও মিডিয়ার সাথে কোনোভাবেই যুক্ত না। ছেলেদের মধ্যেও আমি কয়েকজনের নাম বলব, তার মধ্যে বিখ্যাত হলো আদনান আল রাজিব।
আমার সার্কেলটা ছোট। তাই ঘুরে-ফিরে এই কয়েকজনের সঙ্গেই আমার দেখা হয়। এখন যে এই তিনটা মেয়ের কথা বললাম, তাদের সঙ্গে তারা তো আর আমার রিলেশন বানাইতে পারছে না। তখন কিন্তু ধরেই নেয় রাজিব (আদনান আল রাজিব) আমার...। তবে সেলিব্রেটি গসিপ তো লাইফের একটা পার্ট। এটা সিরিয়াসলি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
প্রিয়.কম: আচ্ছা এই ইস্যুতেই আরেকটা প্রশ্ন চলেই আসে, লাইফ পার্টনার হিসেবে কেমন পারসন চান?
মেহজাবিন চৌধুরী: যে আমার প্রত্যেকটা খারাপ অভ্যাস জানবে, সাথে আমাকে আমার মতো করে অ্যাকসেপ্ট করতে পারবে। অনেক অনেস্ট হবে, আন্ডারস্ট্যান্ডিং হবে। আমি আমার হান্ড্রেড পার্সেন্ট দিব, সেও তারটা দিবে।
প্রিয়.কম: আচ্ছা, আপনার সহকর্মীদের কেউ কেউ চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। আপনিও অনেক দিন ধরে ইচ্ছা পোষণ করছেন। কিন্তু...
মেহজাবিন চৌধুরী: এর সবচেয়ে বড় বাধা আমি নিজে। আমি এখন পর্যন্ত যে চিত্রনাট্যগুলো পেয়েছি, আমি এখন পর্যন্ত আশ্বস্ত না। এ বিষয়টাতে আরও বেশি পছন্দসই চিত্রনাট্যে কাজ করতে চাই। আমি যে বিষয়গুলো নাটকে করে আসছি, সে বিষয়গুলো আমি আবার চলচ্চিত্রে পুনরায় করতে চাই না। আমি ৯ বছর ধরে আছি ইন্ডাস্ট্রিতে। দর্শক আমাকে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে দেখে ফেলছে।
থিমেটিক (বিষয়কেন্দ্রিক) জায়গাটা আমার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে আমি কিন্তু অনেক ভালো ভালো চলচ্চিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু না করার পেছনে কোনো না কোনো কারণ অবশ্যই ছিল। হয়তো গল্পে না হয় অন্য কোনো কিছুতে। তখন কী হয়েছে, তখন আমি আর ওই আগ্রহটা পাইনি।
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন