শর্তসাপেক্ষে গত বছর বাংলাদেশের জন্য ২৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার অনুমোদন দিয়েছিল বিশ^ব্যাংক। এসব শর্তের বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হয়নি। শর্ত বাস্তবায়িত না হলে বাজেট সহায়তাও বিলম্ব হবে। এ নিয়ে গত সপ্তাহে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রেহানা পারভিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা। তারা দ্রুত অর্থছাড়ের জন্য পূর্বের দেওয়া শর্তগুলো জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন। চলতি অর্থবছরে বাজেট সহায়তাসহ অন্যান্য প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জন্য প্রায় ৬০ কোটি ডলার বরাদ্দ রেখেছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
অন্যদিকে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে জলবায়ু-সম্পর্কিত ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে আইএমএফের একটি মিশন আজ রবিবার পাঁচ দিনের সফরে ঢাকায় আসছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তারা বলেছে, আইএমএফের মনেটারি অ্যান্ড ক্যাপিটাল মার্কেট (এমসিএম) ডিপার্টমেন্ট ৫-৯ মার্চ বাংলাদেশে একটি মিশন প্রস্তাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, চলমান ডলার সংকটের সময় বাজেট সহায়তার গুরুত্ব অনেক। ঋণের জন্য বিশ্বব্যাংক ১২টি শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে কিছু শর্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। যেমন- ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসির খসড়া ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। খসড়াটি চূড়ান্ত করার বিষয়ে খুব শিগগির আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বব্যাংকের আরেকটি শর্ত ছিল- ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্রে অটোমেটেড চালান সিস্টেম চালু করা। ইতোমধ্যে এনবিআর তা কার্যকর করেছে। এ ছাড়া শর্তানুযায়ী, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও তার দেওয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তে এ আইন সংশোধনের শর্ত দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের শর্তগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি’ গঠন করা। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে বলে জানান অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।
বিশ্বব্যাংকের শর্তানুযায়ী, ন্যাশনাল হাউস হোল্ড ডাটাবেজ প্রণয়নে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পাওয়ার ট্রান্সমিশন খাতে পিপিপি চালুর বিষয়েও সার্কুলার জারি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে সামাজিক সুরক্ষার পুনঃশ্রেণিকরণ তালিকা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের করপোরেট গভর্ন্যান্সকে জোরদার করার জন্য সার্কুলার জারি এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা গ্রহণের মতো কিছু শর্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই।
আইএমএফের এমসিএম বিভাগের অর্থনীতিবিদ এজেন্স ক্যারেলার নেতৃত্বে আসা মিশনটি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে ভৌত জলবায়ু ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য একটি কাঠামো তৈরি করতে সাহায্য করবে। এর মধ্যে রয়েছে আর্থিক ও জলবায়ু তথ্য শনাক্তকরণ এবং একটি ঝুঁকি মূল্যায়ন কাঠামো ডিজাইন করা, যা ব্যাংকিং খাতে বন্যার মতো দুর্যোগের প্রভাবের ওপর গুরুত্ব দেবে।
চলমান ডলার সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে যে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিচ্ছে। এর মধ্যে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় দেওয়া হচ্ছে। কৃষি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, পানিসম্পদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ- এসব মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে যেসব জলবায়ু বিশেষজ্ঞ রয়েছেন তাদের এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সহযোগিতা ও তথ্য আদান-প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা স্থাপনে সহায়তা করবে মিশনটি।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, আরএসএফ তহবিল পেতে সরকারকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। সে জন্য আগামী বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলাদা বাজেট বই বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আইএমএফ বলছে, আর্থিক খাতের জন্য জলবায়ু ঝুঁকির মূল্যায়নও আরএসএফ ব্যবস্থার অধীনে একটি মূল সংস্কার হিসেবেই বিবেচিত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন