রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট। ১১ বছর আগে এই ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িতদের বেশিরভাগই এখনও আইনের আওতায় আসেনি।
মামলার মুল আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম ও ডিএমডি মোনায়েম খান এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। ডিএমডি ফজলুস সোবহান বিদেশে পলাতক।
আরেক ডিএমডি কনক কুমার পুরকায়স্থ এবং অপর আসামি মোহাম্মদ আলী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। ডিএমডি মোহাম্মদ সেলিম জামিনে রয়েছেন। এছাড়া মামলার আরেক আসামি মোহম্মদ সিফাতউল্লাহও জামিনে মুক্ত।
আলোচিত এই ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় সবমিলিয়ে ৫৬টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন—দুদক। মামলাগুলোর মধ্যে মাত্র দুটিতে অভিযোগপত্র জমা পড়েছে আদালতে। তবে প্রতিবেদন ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় আদালত তা আমলে নেয়নি।
ফলে বড় এই ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় কারা কারা জড়িত তা উদঘাটনে হিমশিম খাচ্ছে দুদক। যদিও বেসিক ব্যাংকের লোপাট হওয়া আড়াই হাজার কোটি টাকা উদ্ধার করাকে সাফল্য হিসেবে দেখছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে বেশি আলোচিত নাম ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু। এ ঘটনায় বেশ কয়েক দফা দুদক তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।
২০০৯ সালে আবদুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান। ২০১২ সালে তার নিয়োগ এক দফা নবায়নও হয়। তবে ২০১৪ সালে ঋণ জালিয়াতি করে বেসিক ব্যাংক থেকে অর্থ লোপাটের খবর প্রকাশ্যে এলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।
এক পর্যায়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণের পর চাপের মুখে ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেন জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচ্চু।
বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকার সময়েই ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি হয়।
এই অভিযোগ তদন্তে নামে দুদক। সংস্থাটির অনুসন্ধানে উঠে আসে—ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণদানসহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদন করে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ।
তবে সেসময় বাচ্চু সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, তিনি যা করেছেন বোর্ডের অনুমোদনের ভেতরেই করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে তিনি ভুল করলেও সব দায় তার নয়।
টানা পাঁচ বছর অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে ৫৬টি মামলা করা হয়। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় এসব মামলায় আসামি করা হয় ১২০ জনকে।
তবে কোনো মামলায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি করা হয়নি। আসামিদের মধ্যে ২৭ ব্যাংকার, ৮২ ঋণগ্রহীতা ও ১১ জন ভূমি জরিপকারী।
এদের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে আসামি করা হয় ৪৮টি মামলায়। ডিএমডি ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো. সেলিম ৮টি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খান ৩৫টি মামলার আসামি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মামলাগুলোর তদন্তের একপর্যায়ে জানা যায়, বেসিক ব্যাংকে দুর্নীতির কিছু টাকা মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। সেসব টাকা ফেরতে দুদকের পক্ষ থেকে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলআর) পাঠানো হলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বাচ্চুর বিষয়ে দুদকের বরাবরই বক্তব্য ছিল—ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দালিলিকভাবে আব্দুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। যদিও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের নিয়োগ করা নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে অনিয়মিত ঋণ মঞ্জুর, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে অভিযোগ তুলেছিলেন।
মুল হোতাদের এখন কে কোথায়?
বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। ডিএমডি ফজলুস সোবহান বিদেশে পলাতক। ডিএমডি মোনায়েম খানও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
আরেক ডিএমডি কনক কুমার পুরকায়স্থ বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। ডিএমডি মোহাম্মদ সেলিম জামিনে রয়েছেন। মামলার অপর আসামি মোহাম্মদ আলী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। এছাড়া মোহম্মদ সিফাতউল্লাহ জামিনে রয়েছেন।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন