বাংলাদেশে ঈদের বাজার ভারতীয় পণ্যের দখলে। ঈদ বাজার ভারতীয় পণ্যে সয়লাব। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণি বিতান সবখানেই ভারতীয় পণ্যের প্রধান্য। হরেক বাহারি ডিজাইনের জামা, প্রসাধনী, ইমিটেশন জুয়েলারি থেকে শুরু করে ঈদে কেনাকাটায় সংশ্লিষ্ট উপহার সামগ্রী আসছে ভারত থেকে। ভারতীয় পণ্যের আগ্রাসনে দেশি উদ্যোক্তারা দিশেহারা।
গত দুই বছর ছিল করোনা মহামারির ছোবল। ঈদ আসলেও ব্যবসা তেমন জমেনি। করোনার ধাক্কা সামলে এবারই পুরোদমে ঈদকে ঘিরে জমে উঠেছে ব্যবসাপাতি। ফুটপাথ থেকে বিপণি বিতানগুলোতে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কিন্তু, ভারতীয় পণ্যের কাছে দেশি পণ্যের উদ্যোক্তারা টিকতে পারছেন না।
শুধু ঈদকে ঘিরেই নয়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মাঠগুলোতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা সাপ্তাহিক মেলার আয়োজন করেন। এই মেলাতেও বেশিরভাগ বিক্রেতারাই ভারতীয় পণ্যের পসারা সাজিয়ে বসেন।
রাজধানী ঢাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানান, সারা বছরই ভারতীয় পণ্যের অবাধ বেচাকেনা হলে। তবে ঈদকে ঘিরে সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাপথে অনেক পণ্য মার্কেটগুলোতে ঢুকে। যার কোন আমদানী শুল্ক রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যায় না। চোরাপথে আসা পণ্য তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হয়। কারণ, তাদের আমদানী শুল্ক দিতে হয় না। এতে করে সঠিকপথে যারা ব্যবসা করছেন, তারা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন।
গাউসিয়া চাঁদনী চক মার্কেটের এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের উচিত এসব দিকে নজর দেয়া। বাংলাদেশ এখন ভারতীয় পণ্যের বাজারে পরিণত হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশীয় পণ্যের ব্যবসা গুটিয়ে ভারতের পণ্য নিয়েই আমাদের বসতে হবে।
দেশের বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের হাট ভারতীয় পণ্যে সয়লাব:
দেশের বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের হাট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাউছিয়া মার্কেট। সারাবছর পাইকার আর খুচরা বিক্রেতা ছাড়াও সাধারণ ক্রেতাদের ভীড়ে জমজমাট থাকে মার্কেটটি। প্রতি মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক হাট বসলেও, প্রকৃতপক্ষে পুরো সপ্তাহজুড়েই এখানকার ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করেন। আর ঈদ এলে তো কথাই নেই।
বাংলাদেশের সংখ্যাগরীষ্ঠ মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদকেই যেন টার্গেট করেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। সুযোগ বুঝে ভারতও সীমান্ত অনেকটা খুলে দেয়। দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই পাইকারী বাজারে দেশি কাপড়ের কাটতি অনেক কম। ফলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও যেন দেশি পণ্যে বেশি টান অনুভব করেন না।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শাড়ীর দোকানগুলো শাড়ী, রেডিমেড কাপড়ের এবং ভারতীয় থ্রীপিসে দোকান ঠাঁসা। ক্রেতা আসলে দোকানীরা সেগুলোই তাদের কাছে তুলে ধরছেন। শুধু তাই নয়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের পাঞ্জাবিও রয়েছে ভারতীয় কাপড়ের দখলে।
এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানের শুরু থেকেই ঈদের কেনাকাটা শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ পাশাপাশি নতুন ডিজাইন আর বাহারী গর্জিয়াস সব কাপড়ের সমাহার ঘটাতে দেশী কাপড়ের পাশাপাশি রাখা হয়েছে চীন, ভারত,পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ানসহ ভীনদেশী কাপড়।
গাউছিয়া মার্কেটের পুজা ফ্যাশন নামীয় একটি প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় সেখানে ভারতীয় শাড়ির রমরমা ব্যবসা। দোকানটির মালিক অজিত পাল বলেন, ভারতীয় শাড়ীর চাহিদা বেশি। দেশী কাপড় গরীবরা কেনে। ধনীদের চাহিদা কেবল বিদেশি কাপড়।
তিনি বলেন, দোকানে দেশীয় জামদানী, টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ী, সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি গামছা ছাড়াও দেশীয় নানা কাপড় রয়েছে। পাশাপাশি ভারতীয় শাড়ীও রয়েছে। কিন্তু অতীতে দেখেছি দেশী কাপড়গুলো অবিক্রীত থেকে যায়।
একই অবস্থা দেখা গেছে, মেয়েদের থ্রি পিসের দোকানেও। গাউছিয়া-২ এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কোয়ালিটি ফ্যাশন নামের একটি দোকানে দেখা গেছে ভারতীয় থ্রি পিসে ঠাঁসা। দেশীয় কাপড় নেই বললেই চলে।
দাকানটির মালিক আফজাল হোসেন বলেন, পাবলিক যেমন চায়,আমরা তেমন কালেকশন রাখি। আমাদের তো ব্যবসা দরকার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গাউছিয়াসহ আশপাশের কাপড়ের হাটে পাওয়া যাচ্ছে চোরাচালানে আসা ভারতীয় শাড়ী কাপড়। দোকানে দোকানে এসব কাপড় দেশীয় কাপড়ের আড়ালে এগুলো রাখা হয়। ক্রেতা এলে তা দেখানো হয়। এমনকি, খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমেও পাড়া-মহল্লার দোকানে এগুলো বিক্রি করা হয়।
লোক দেখানো অভিযান:
জনগণের চোখে ধুলো দিতে মাঝেমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় পণ্য জব্দ করলেও, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা জানান তা নিতান্তই কম।
সোমবার বিকেলে (২৫শে এপ্রিল) কুমিল্লায় এমনি একটি চোরাচালান জব্দ করা হয়েছে। এতে ৬০ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ভারতীয় পণ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ এলাকা থেকে ভারতীয় পণ্যসহ এসএ পরিবহন লিমিটেডের কাভার্ডভ্যান টি জব্দ করা হয়। বিজিবি-১০, সদর দক্ষিণ মডেল থানা এবং উপজেলা প্রশাসনের এই টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করে।
কুমিল্লা বিজিবি-১০ এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, জব্দ করা পণ্যগুলোর মধ্যে ৪৭ হাজার ৫১৮টি নেহা মেহেদী, ৪ হাজার ২০০টি বিভিন্ন প্রকার বাজি, ১ হাজার ৮৮৪টি মুভ ক্রিম, ৬ হাজার ৩৬০টি স্ক্রিন সাইন ক্রিম এবং ১ হাজার ৪৪০ প্যাকেট বাউন্স বিস্কুট জব্দ করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন