বিভিন্ন সূচকে আগের বছরের তুলনায সোনালী ব্যাংক অনেক ভালো করলেও ব্যাংকটির একটি সমস্যা রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে ‘সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলন ২০২০’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
গভর্নর বলেন, শেরাটন শাখার হলমার্ক কেলেঙ্কারির ভয় এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি সোনালী ব্যাংক। সেই ঘটনার পর থেকে এখনও ঋণ বিতরণে দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন কর্মকর্তারা। কিন্তু এটা থাকা উচিত নয়। ব্যাংক ব্যবসায় এগুলো থাকবেই। বিতরণকৃত ঋণ কখনো সন্দেহজনক, কখনো মন্দ মানের হবেই। কিন্তু তাই বলে ঋণ দেয়া বন্ধ করবেন নাকি?
গভর্নর বলেন, বিভিন্ন সূচকে আগের বছরের তুলনায় সোনালী ব্যাংক অনেক ভালো করেছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা পর্যাপ্ততা সহ বিভিন্ন সূচকে সোনালী ব্যাংকের পারফরম্যান্স ভালো।
সামনে এগিয়ে যেতে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকের ভূমিকা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, আমাদের দেশের মধ্যে ব্যাংকিং খাত এক অনন্য উচ্চতায় উঠে এসেছে। ব্যাংকিং খাতের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সুতরাং এই ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অনেক। বর্তমানে দেশের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। যা মোট বিতরনের ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। একটি দেশের অর্থনীতির জন্য এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে সেপ্টেম্বর শেষে এটা অনেক বেশি ছিল। খেলাপি কমিয়ে আনতে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১০ বছর মেয়াদী রিসিডিউল পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রতি অভিযোগ এনে ফজলে কবির বলেন, দেশি ও বিদেশি কিছু গবেষণা সংস্থা দেশের মোট ক্ষতিগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করছে অবলোপন এবং রিসিডিউল এর টাকা। কিন্তু রিসিডিউল একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রকৃতপক্ষে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক কম। বিশ্ব অর্থনীতির কথা চিন্তা করে সচেতনভাবে ঋণ বিতরণ এবং খেলাপি ঋণ থেকে আদায়ের প্রক্রিয়া জোরদার করার আহ্বান জানান গভর্নর। এজন্য উৎপাদনশীল খাতে ঋণ বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট খাত বা ব্যক্তির কাছে যেন ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে না যায় সে বিষয়ে ও লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার ক্ষেত্রে বেকারদের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন গভর্নর। এটা যেন পরবর্তীতে চাপে পরিণত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ ব্যাংকের জন্য এটি একটি বোঝা।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান জানান, সোনালী ব্যাংকের এবছরের স্লোগান ‘ দীপ্ত শপথ মুজিববর্ষে, আমরা যাবো সবার শীর্ষে’। এই স্লোগানকে সামনে রেখে ব্যাংকিংখাতে আমরা শীর্ষে যেতে চাই। মুখে নয় কাজে বাস্তবায়ন করে আগামী বছরে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক অংকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হবে বলেও প্রত্যাশা রাখেন তিনি।
২০১৯ সালে সরকারি ব্যাংক গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে সোনালী ব্যাংক। কিন্তু ৫২টি সেবার মধ্যে ৩৭টি সেবা বিনামূল্যে দেয়ার কারণে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা মুনাফা কম হয় বলেও জানান তিনি। এসব সেবার মান আরো উন্নত করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন