রাজধানীর প্রতিটি বাজারের দৃশ্যমান স্থানে একটি নোটিশ বোর্ডে প্রতিদিনকার নিত্যপণ্যের দাম লিখে রাখার নির্দেশনা রয়েছে। বেশির ভাগ বাজারেই এটি নেই।
দু-একটি বাজারে থাকলেও বাজারদরের সঙ্গে এর মিল নেই। বিষয়টি স্থানীয় বাজার কমিটি, সিটি কর্পোরেশন ও কৃষি বিপণন অধিদফতর থেকে তদারকিও করা হচ্ছে না। ফলে ভোক্তারা নায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারছেন না। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন-
রাজধানীর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারগুলোয় পণ্যমূল্যের তালিকা টানানোর নিয়ম মানছেন না ব্যবসায়ীরা। প্রায় সব বাজারেই পণ্যমূল্য টানানোর জন্য নির্ধারিত একটি স্থান রয়েছে। ওখানে নোটিশ বোর্ডও আছে। কিন্তু মূল্যতালিকা নেই। কিছু বাজারে তালিকা থাকলেও সেগুলো নিয়মিত হালনাগাদ করা হয় না। দু-একটি বাজারে হালনাগাদ করা হলেও বাজারমূল্যের সঙ্গে বোর্ডে লেখা মূল্যের মিল নেই। এদিকে বিষয়টি তদারকিও করা হচ্ছে না। ফলে ভোক্তারা নায্যমূল্যে পণ্য কেনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
পণ্যমূল্যে শৃঙ্খলা রাখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিটি বাজারের একটি দৃশ্যমান স্থানে নোটিশ বোর্ডে প্রতিদিনকার মূল্যতালিকা টানানোর নির্দেশ দিয়েছিল। স্থানীয় বাজার কমিটি, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও কৃষি বিপণন অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি এ বিষয়টি তদারকি করার কথা। কিন্তু বাস্তবে এটি কোনো পক্ষই তদারকি করছে না। ফলে ভোক্তাদের স্বার্থে দেয়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশটি কাগজেকলমেই রয়ে গেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, আমাদের বাজার কমিটির যেসব সভাপতি আছেন, তাদের কাছে আমরা বাজারমূল্যের তালিকা অনলাইনেও পাঠাই আবার এমনিতেও পাঠাই। প্রত্যেকটি বাজারের কাছে আমাদের আঞ্চলিক কর্মকর্তা আছেন।
তারাও এটা দেখভাল করেন। হয়তো অনেক সময় লোকবল সংকটসহ বিভিন্ন কারণেই এটি বিলম্বিত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। নয়াবাজার ঘুরে সিটি কর্পোরেশন মার্কেটে নির্ধারিত দৃশ্যমান জায়গায় কোনো মূল্যতালিকা দেখা যায়নি। বাজারের নিত্যপণ্য কিনতে আসা একাধিক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে আগে একটি মূল্যতালিকা ছিল।
তখনও ঠিকভাবে পণ্যের দাম সেখানে লেখা হতো না। এখন সেই মূল্যতালিকাও নেই। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বাজারে মূল্যতালিকা থাকা আর না থাকা সমান। কারণ মানুষ বাজারে মূল্যতালিকা দেখে না। সরাসরি বিক্রেতাদের সঙ্গে দর যাচাই করে পণ্য কিনে। কারওয়ান বাজারের চিকেন মার্কেটের নিচতলায় সিঁড়িঘরের নিচে অদৃশ্যমান জায়গায় সিটি কর্পোরেশনের দেয়া মূল্যতালিকা টানানো আছে।
কিন্তু সেখানে পণ্যের নাম থাকলেও দামের ঘর খালি। সেখানে গত এক সপ্তাহেও কোনো মূল্যতালিকা লিখতে দেখা যায়নি বলে জানান স্থানীয়রা। বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. মখলেসুর রহমান জানান, প্রতি সপ্তাহে এই বাজার থেকে নিত্যপণ্য কেনেন তিনি। কিন্তু এখানে কোনো মূল্যতালিকা চোখেই পরেনি তার। একই বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. সুমন বলেন, তালিকা দেখেছি; কিন্তু এ পর্যন্ত কোনোদিন পণ্যমূল্য লেখা চোখে পরেনি।
রায়েরবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সিটি কর্পোরেশন মার্কেট নামে বড় একটি মূল ফটক থাকলেও অনুমোদিত পণ্যের মূল্যতালিকা নেই। অন্যদিকে কারওয়ানবাজার ও হাতিরপুল কাঁচাবাজারের দৃশ্য পুরোই উল্টো।
বাজারের সামনেই বড় করে সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত মূল্যের তালিকা টানানো রয়েছে। কিন্তু বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি সবজি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে তিন থেকে চার টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারের সামনে মূল্যতালিকা থাকলেও তা অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করছে না দোকানিরা। বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা আলেয়া বেগম বলেন, সিটি কর্পোরেশনের নিয়ম অনুসারে বাজারে মূল্যতালিকা ঠিকই টানানো আছে; কিন্তু বিক্রেতারা সেটির কোনো তোয়াক্কাই করেন না।
মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেড কাঁচাবাজারে পণ্যমূল্য টানানোর জন্য নোটিশ বোর্ড রয়েছে। কিন্তু এতে মূল্যতালিকা লেখা হয় না। নোটিশ বোর্ডের সামনে রয়েছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারের নোটিশ বোর্ড থাকলেও তাতে পণ্যমূল্য লেখা নেই। একই অবস্থা কৃষিমার্কেটে।
এ বাজারের দোতলায় কৃষি বিপণন অধিদফতরের একটি অফিস রয়েছে। তারা বাজার থেকে মূল্যতালিকা সংগ্রহ করে তা প্রধান কার্যালয়ে পাঠায়। এছাড়া প্রতি বাজারের কাছেই সিটি কর্পোরেশনের অফিস রয়েছে। সেখান থেকেও এটি তদারকি হয় না।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, আমরা অধিদফতরের পক্ষ থেকে সপ্তাহের ৬ দিন নিয়মিত বাজার তদারকি করি। সেখানে মূল্যতালিকা থেকে বেশি নেয়ার কোনো অনিয়ম পেলে ভোক্তা আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিয়ে থাকি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন