ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফেরাতে চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে নির্দেশনা দিয়েছেন।
সর্বশেষ তিনি ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালক পর্ষদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। সেখানে বলেছেন, অন্যায় করে কোনো পরিচালক পার পাবেন না। তাদের সব কর্মকা- মনিটর করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সরকারের এমন উদ্যোগকে ইতিবাচক বলেছেন ব্যাংকাররা। তবে পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে পেশাদারদের নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, এটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। পরিচালনা পর্ষদের যে দায়িত্ব আছে, তা পরিপালন করা তাদের কাজ। কিন্তু বেআইনি কোনো কিছু করা হলে তা মনিটর করা উচিত। নিয়োগ দেওয়ার সময়ই দেখে নিয়োগ দেওয়া উচিত। রাজনৈতিক মোটিভেটেড কাউকে নিয়োগ করলে তা ভালো হবে না।
সূত্র জানায়, পরিচালক নিয়োগে ব্যাংক যোগ্য ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। মৌখিক পরীক্ষা ভালোমতো নিয়েই ব্যাংক পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে।
এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে আমার কাছে কোনো সুপারিশ এলে সেটা গ্রহণ করা হবে না। যোগ্য ব্যক্তিদের হাতেই ব্যাংক তুলে দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরই ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেন। এ বিষয়ে তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে তিনি বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেন।
জানা গেছে, গত ১০ বছরে ব্যাংক খাতে নানা জালিয়াতি ও অব্যবস্থাপনার ঘটনা সামনে এসেছে। তবে তার দু-একটি ঘটনায় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা জবাবদিহিতার আওতায় এলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পর্ষদ দায়মুক্তি পেয়েছে। এমনকি পুরস্কৃত হয়েছেন কেউ কেউ। তবে বলির পাঁঠা হতে হয়েছে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের। অপসারণসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। জেলও খেটেছেন।
ব্যাংকাররা বলছেন, পরিচালনা পর্ষদের সম্পৃক্ততা ছাড়া একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কোনো অনিয়ম বা জালিয়াতি করতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে এবার বড় পরিসরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের দক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এর আগে সীমিত পরিসরে একবার পরিচালকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। বর্তমানে দেশে সরকারি ব্যাংকের সংখ্যা আটটি। এর মধ্যে ৬টি বাণিজ্যিক ও দুটি বিশেষায়িত ব্যাংক। এসব ব্যাংকে প্রায় ১০০ পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। যাদের বেশির ভাগই সাবেক আমলা। এর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী রয়েছেন। অনেক পরিচালকের বিরুদ্ধে তদবিরসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ব্যাংক কোম্পানি আইনে পরিচালকদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা আছে; সেটি পরিপালনের নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
জানা গেছে, পরিচালকদের ব্যাংকের নীতি-নির্দেশনা প্রণয়ন এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান সুচারুরূপে সম্পন্নকরণে তথা ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত ও পেশাগতভাবে দক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। ব্যাংক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব অপরাপর কোম্পানির তুলনায় অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্যাংকের কর্মকা- প্রধানত আমানতকারীদের অর্থে পরিচালিত হয় এবং এ ক্ষেত্রে আমানতকারীদের আস্থা অর্জন ও তা ধরে রাখা অপরিহার্য। সুশাসনের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে পরিচালনা পর্ষদের গঠন, দায়দায়িত্ব ও তদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নজর দেওয়ার কথা ব্যাংক পরিচালকদের।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন