নানা অনিয়ম ও তারল্য সংকটে ব্যাংক খাতের নাজুক অবস্থার সময় আরও তিনটি নতুন ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সভায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের আবেদন করা তিনটি ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অনুমোদন পেতে যাওয়া ব্যাংক তিনটি হলো- বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, পিপলস ব্যাংক লিমিটেড ও সিটিজেনস ব্যাংক লিমিটেড।
গত ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল ব্যাংক তিনটির ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ ইস্যুর সিদ্ধান্তে সই করেছেন।
বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোর্শেদ আলম এই গ্রুপের চেয়ারম্যান। তার ছোটভাই জসিম উদ্দিন প্রস্তাবিত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হকের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল সিটিজেনস ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে। আর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা এম এ কাশেমের নাম রয়েছে পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে।
গত বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে চাপ আসা সত্ত্বেও নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার প্রস্তাবটি স্থগিত রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকাররা নতুন ব্যাংকের বিষয়ে বরাবরই বিরোধিতা করে বলছেন, বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেছে। বর্তমান অবস্থায় দেশে আর ব্যাংকের প্রয়োজন নেই।
তারা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা এমনিতেই খারাপ। এ পরিস্থিতিতে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না।
তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ক্রমাগত আসতে থাকা চাপে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিরোধ টিকতে পারেনি। গত ২৫ সেপ্টেম্বরও এক চিঠিতে মুহিত এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে দেওয়া ওই চিঠিতে মুহিত লিখেন, “সম্ভবত, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি প্রস্তাবিত একটি ব্যাংককে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি আপনাকে প্রস্তাবিত সবগুলো ব্যাংককে একে একে লাইসেন্স দেওয়ার অনুরোধ করছি।”
চিঠিতে তিনি আরও বলেন, ‘‘সম্প্রতি এক বৈঠকে প্রস্তাবিত ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স প্রদানে সম্মত হয়েছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও উপস্থিত ছিলেন।”
তবে তার একদিন আগে অর্থাৎ গত ২৪ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেছিলেন, “দেশের ব্যাংক খাত খুব বেশি বড় হয়ে গেছে। আর্থিক খাতের চাহিদার তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি বলে ব্যাংকাররাই মনে করছেন। তাই এ খাত সংকোচনের দরকার হতে পারে।”
বাংলাদেশে এখন সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৫৯টি ব্যাংক রয়েছে, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩৪টি।
আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে ২০১২ সালে নয়টি বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় ওই ব্যাংকগুলোর অনুমোদন দেওয়া নিয়ে সে সময় সমালোচনা হয়।
ঋণ কেলেঙ্কারির কয়েকটি বড় ঘটনায় গত কয়েক বছর ধরেই দেশের ব্যাংক খাত আলোচনায় রয়েছে। সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়া কয়েকটি ব্যাংকও অনিয়ম আর তারল্য সংকটে ধুঁকছে।
গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানান দিচ্ছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন