আলু আর আলু। এ যেন আলুর পাহাড়! জমি থেকে তোলার পর সেখানেই পানিতে ধুয়ে নেওয়া হচ্ছে আলু। তা বস্তায় ভরে বাজারে আনা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও আলুতে যেন মাটির ছাপ লেগে থাকছে। পরে বাজারের নির্ধারিত স্থানে আলু ঢেলে ফেলা হচ্ছে।
আবার নতুন করে ধোয়ার পর স্তুপ আকারে রাখা হচ্ছে। তবে উৎপাদিত আলুর দাম নিয়ে বড়ই চিন্তিত কৃষক। খুচরা বাজারে দাম থাকলেও পাইকারি বাজারে আলুর দাম ক্রমেই পড়ে যাচ্ছে। অথচ আগাম জাতের এসব আলুর দামের আগে কখনো এতো কম যায়নি। কিন্তু মোকামে প্রতিদিন যেন আলুর পাহাড় নিয়ে হাজির হচ্ছেন কৃষকরা।
তাদের ভাষ্য, ‘আগাম জাতের আলুর দামই পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে পরের ধাপে সেসব আলু তোলার পর্যায়ে আছে সেগুলোর কি অবস্থা হবে তা নিয়ে খুবই চিন্তিত এবারের আলু চাষিরা। তাই কূল কিনারা করতে না পেয়ে সবকিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আলু চাষিরা।
উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজি মোকামখ্যাত বগুড়ার মহাস্থানহাটে গিয়ে একাধিক আলু চাষি ও পাইকারিবিক্রেতার সঙ্গে কথা হলে ওঠে আসে এমন তথ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোর থেকেই হাটে আলুসহ শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজি আসা শুরু করে। ভ্যান, ভটভটি, পিকআপভ্যান, বস্তায় ভরে অনেকেই বাইসাকেলেসহ নানা উপায়ে হাটে আলু নিয়ে আসেন। সেই আলু বাজারের নির্ধারিত স্থানে রাখেন। আলুর গায়ে মাটির ছাপ থাকলে সেখানেই তা ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেসব আলু অর্ধেক কাটা ড্রামে রাখা হয়। এরপর পানি দিয়ে তা পরিষ্কার করা হয়। পরে সেগুলো স্তুপ আকারে রাখা হয়। বিক্রির পর তা বস্তায় ভরে ট্রাকে উঠানো হয়।
কথা হয় মহাস্থানহাটে আলু বিক্রি করতে আসা চাষি আজগর আলীর সঙ্গে। এই চাষি বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছরের মতো এবারো তিনি জমিতে আগাম জাতের আলু লাগিয়েছিলেন। শুরুর দিকে আলুর দাম বেশ ভালই পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে বাজরের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তার মতো কৃষক আলুর এমন দাম পেলে হয়তো আগামীতে আলু চাষ বন্ধ করে দিতে হবে।
আরেক চাষি শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তিনি প্রায় ৫ বিঘা জমিতে লাল পাকড়ি জাতের আলু লাগিয়েছিলেন। সেই আলু উঠানোর কাজও প্রায় শেষ। কিন্তু বাজারে আলুর দাম কই। প্রথমদিকে একটু ভাল দাম পেলেও এখন আলুর দাম একেবারেই পড়ে গেছে। ফলে লাভ তো দূরের কথা মূলধন ওঠাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
মহাস্থানহাটে আলু বিক্রি করতে আসা এসব আলু চাষিরা বাংলানিউজকে জানান, সাধারণত লাল পাকড়ি, গ্যানোলাসহ কয়েকটি জাতকে আগামজাত হিসেবে ধরে কৃষকরা প্রতিবার শীত মৌসুমে এসব আলু চাষ করে থাকেন। তবে এ অঞ্চলের কৃষকরা সাধারণ লাল পাকড়ি, এক ধরনের সাদা গ্যানোলা ও কার্ডিনাল জাতের আলু চাষ করেন।
তারা জানান, বর্তমানে প্রতিকেজি লাল পাকড়ি পাইকারি হিসেবে ১৪ টাকা, সাদা ধরনের গ্যানোলা জাতের আলু প্রতিকেজি ৬ টাকা ও কার্ডিনাল জাতের আলু ৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দিন যাচ্ছে আর আলুর দাম কমছে যোগ করেন এসব আলু চাষিরা।
মজনু মিয়া ও মিঠু মিয়া নামে দু’জন ফড়িয়া মহাস্থানহাটে আসা দূর-দূরান্ত থেকে আসা মহাজনদের হয়ে আলু ক্রয় করেন। তারা বাংলানিউজকে জানান, আবহাওয়া ভাল থাকায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাহিদার অতিরিক্ত আলু প্রতিদিন বাজারে আসছে। মহাজনরা তারই সুযোগ দিয়ে কম দামে আলু কিনছেন।
তারা আরো জানান, এসব আলু রাজধান ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি যায়। এছাড়াও দূর-দূরান্তের বিভিন্ন বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা শহর থেকে বেপারী এসে এই মোকাম থেকে আলুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি কিনে থাকেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন