ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের চাক্তাই এলাকায় ডাল, চাল, চিনি, গমসহ ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা করতেন মহিউদ্দিন মারুফ চৌধুরী। পণ্য আমদানি করতে নানা সময় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নেন। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে আগ্রহ নেই খাতুনগঞ্জের এ ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীর। কয়েকটি ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকা ঋণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পরিশোধ করছেন না তিনি। তার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মহিউদ্দিন করপোরেশনের কাছে সোনালী ব্যাংকের পাওনা প্রায় ৬৩ কোটি টাকা।
সোনালী ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করে মহিউদ্দিন করপোরেশন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ না করায় ২০১২ সালের দিকে তা শ্রেণীকৃত হয়ে যায়। ওই সময় বহু চেষ্টার পরও ঋণের টাকা ফেরত না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারের বিরুদ্ধে মামলা করে সোনালী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। এনআই অ্যাক্টে দায়ের করা চেকের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ ঘোষণা করেছেন আদালত। যদিও রায়ের পর থেকেই তিনি পলাতক। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কাছে সোনালী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার মোট পাওনা ৬২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
এরপর ঋণ আদায়ে মহিউদ্দিন করপোরেশনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে মামলা করে সোনালী ব্যাংক। এমনকি অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩-এর ১২ ধারায় প্রতিষ্ঠানটির ৬ দশমিক ৮৩ একর বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তোলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই সম্পত্তি ক্রয়ে আগ্রহী কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ আট বছরেও ঋণের টাকা ফেরত না পেয়ে ঋণটি অবলোপন করেছে ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট শাখা।
এ বিষয়ে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, বহু চেষ্টার পরও টাকা ফেরত না পেয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মহিউদ্দিন মারুফ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। কিন্তু মামলা দায়েরের পর অর্ধযুগ পার হলেও টাকা উদ্ধার সম্ভব হয়নি। ফলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনায় ঋণটি অবলোপন করা হয়েছে। যদিও বড় অংকের ঋণ অবলোপন করার কারণে শাখাটির অবস্থা ভালো নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, মহিউদ্দিন করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী মহিউদ্দিন মারুফ চৌধুরীর তেমন কোনো ব্যবসা ছিল না। এখনো তার উল্লেখ করার মতো ব্যবসা নেই। মূলত তার চাচা রাশেদ উদ্দিন চৌধুরীর প্রভাবে ব্যাংক থেকে এ ঋণ সুবিধা পান তিনি। রাশেদ উদ্দিন চৌধুরীর কাছেও বিভিন্ন ব্যাংক ও বাজারের অনেক ব্যবসায়ীর শতকোটি টাকা পাওনা রয়েছে। পাওনা পরিশোধ না করে তিন-চার বছর আগে বিদেশে পালিয়ে যান রাশেদ।
সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ও আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঋণটি উদ্ধারে আমরা সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হচ্ছে। বন্ধকি সম্পত্তির ক্রেতা না পাওয়া ও মামলার কোনো সুরাহা না হওয়ায় ঋণ উদ্ধার কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনায় এরই মধ্যে ঋণটি অবলোপন করা হয়েছে। এর পরও ঋণের টাকা উদ্ধারে আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু ঋণগ্রহীতার পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন