দেশের টেলিকম অপারেটরগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। নিয়ন্ত্রক এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে টেলিকম অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড। এর আগে পাল্টা অভিযোগও ছুড়েছিল বিটিআরসি।
টেলিকম অপারেটরটির অভিযোগ, কথা না শুনেই তাদের বিরুদ্ধে হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। সম্প্রতি রবির কাছে বিটিআরসির পাঠানো এক জরিমানাবিষয়ক চিঠি পাঠানোর পর এমন অভিযোগ উঠে আসে রবির পক্ষ থেকে।
জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাফোন লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির কাছ থেকে অননুমোদিত ট্রান্সমিশন সেবা নেওয়ার বিষয়ে রবিকে কারণ দর্শানোর নির্দেশনা দেয় বিটিআরসি। বিটিআরসির দাবি, ওই নোটিশের বিপরীতে রবি কোনো উত্তর দেয়নি।
পরে অবৈধ ওই ট্রান্সমিশন সেবা বন্ধের জন্য রবিকে এক মাসের সময় দেয় বিটিআরসি। সর্বশেষ জুলাই মাসে বিটিআরসি এক চিঠির মাধ্যমে রবিকে সতর্ক করে দেয়। চিঠিতে বলা হয়, রবি এই কাজ অব্যাহত রাখলে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে। বিটিআরসির দাবি, ওই চিঠিরও উত্তর দেয়নি রবি।
পরে চলতি মাসের ১০ তারিখে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করে রবির কাছে চিঠি পাঠায় বিটিআরসি। জরিমানাকৃত অর্থ দিতে রবিকে ১০ দিন সময় দেওয়া হয় চিঠিতে।
এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে রবির অভিযোগ, এই ইস্যুতে বিটিআরসির প্রতিটি চিঠির উত্তর দিয়েছে তারা। কিন্তু বিটিআরসি তা আমলে নেয়নি।
এ বিষয়ে রবির মিডিয়া, কমিউনিকেশনস অ্যান্ড সাস্টেইনেবিলিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবীর প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় এই ইস্যুতে বিটিআরসিকে আমাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। কিন্তু তারা বরাবরই তা অস্বীকার করেছে। এইটা স্পষ্ট যে বিটিআরসি, রবির সঙ্গে বিটিসিএলের (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড) চুক্তির কথা মাথায় না রেখেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।’
এদিকে রবির এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কথা বলতে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান ও কমিশনার জহুরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাতে রয়েছেন বলে জানান।
দেশে থাকা বিটিআরসির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক জাকির হোসেন খানের সঙ্গে ১২ সেপ্টেম্বর, বুধবার যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি দৈনিকের কথা বলে জানান, রবির জরিমানার বিষয়ে যে রিপোর্টটি প্রকাশ হয়েছে তা সবার কাছে (সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে) পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘রবি যে কথা বলতেছে এ কথা আদৌ সত্য কি না, তা হয়তো আমাকে জানাবে। এইটা কালকে (১৩ সেপ্টেম্বর) পাব। কালকে পেলে দিয়ে দেবো।’
এদিকে ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে তাকে মোবাইল করা হলে তিনি কলটি কেটে দেন এবং পরে কল দেবেন এমন মেসেজ পাঠান। সর্বশেষ বিকেল ৩টা ৫১ মিনিটে মেসেজের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান।
কেন এই জরিমানা
চলতি বছর নিয়মভঙ্গ করায় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বাংলাফোনের লাইসেন্স বাতিল করে বিটিআরসি। একই সঙ্গে দেশের সব টেলিকম অপারেটরকে বাংলাফোনের থেকে সেবা না নিতে নির্দেশনা দেয় নিয়ন্ত্রক এই সংস্থাটি।
সর্বশেষ বিটিআরসির দাবি, রবি বাংলাফোনের কাছ থেকে সেবা নেওয়া অব্যাহত রেখেছে। এই কারণে রবিকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রবি কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, তারা বাংলাফোনের কাছ থেকে নয়, বিটিসিএলের কাছ থেকে ট্রান্সমিশন সেবা নিয়ে থাকে। তাদের এই জরিমানা করা অযৌক্তিক। এ ছাড়া রবি বিটিসিএল ছাড়া আর কোনো ফাইবার অপারেটরের কাছ থেকে ফাইবার সুবিধা নেয় না বলেও জানিয়েছে রবি।
রবির ভাষ্য অনুযায়ী বিটিসিএলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রিয়.কম। তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তাৎক্ষণিক কাউকে পাওয়া যায়নি।
পরে বাংলাফোনের প্রশাসন বিভাগে যোগাযোগ করা হয়। প্রশাসন বিভাগের মাহবুব রহমান মোবাইলে প্রিয়.কমকে জানান, বর্তমানে রবির সঙ্গে তাদের এ বিষয়ে কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের জটিলতা রয়েছে বিটিআরসির সাথে। এ জন্য অফ রয়েছে।’
টেলিটকের সঙ্গে বাংলাফোনের সংযোগ রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, রবির আগেই টেলিটক সেবা নেওয়া বন্ধ করেছে।
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন