রাজধানীর পুরান ঢাকার ঈদ বাজারে চলছে মন্দাভাব। ঈদ উপলক্ষে বেশি বিক্রির আশায় অনেক বিক্রেতাই বরাবরের মতো অতিরিক্ত পণ্য তুলে পড়েছেন বিপাকে। এমন মন্দাভাব গত এক দশকে ছিল না বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়। অন্যদিকে রাজধানীর ফুটপাতগুলোতে ক্রেতার কমতি নেই, চলছে চাঙ্গাভাব।
সরেজমিনে রোববার পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাট, পাটুয়াটুলী, নবাব বাড়ি, সদরঘাটের গ্রেটওয়াল, শরীফ মার্কেট, ওয়ারীর আড়ং, বিগ বাজার, টিকাটুলিতে বৃহৎ রাজধানী সুপার মার্কেট এবং গুলিস্তান এলাকায় কয়েকটি মার্কেট ঘুরে এমনি চিত্র দেখা যায়। অধিকাংশ শপিংমলে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকলেও মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্তের একমাত্র ভরসা হকার্স মার্কেটগুলোতেও কেনাকেটায় মন্দাভাব দেখা গেছে।
পাটুয়াটুলীর কাপড়ের ব্যবসায়ী হাসান বলেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে ব্যবসায় এতোটা মন্দাভাব দেখিনি। দুইদিন পরই ঈদ। অথচ এই সময়ের মধ্যে আমাদের যতটুকু বেচাবিক্রি হওয়ার কথা, সেই তুলনায় আমাদের বিক্রি অনেক মন্দা। এ মন্দার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পুরান ঢাকার ছোটবড় মার্কেটগুলোর চারপাশে গড়ে উঠেছে ফুটপাত।
এ ব্যাপারে টিকাটুলি রাজধানী সুপার মার্কেটের সোনারগাঁও শাড়ীর কর্ণধার জানে আলম আমাদেরসময়ডটকমকে বলেন, গত প্রায় এক যুগ ধরে ব্যবসায় এতোটা খারাপ হয়নি। তিনটা রাত পোহালেই ঈদ। অথচ লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল বোঝাই করে আমরা নিরাশ হয়ে আছি। বাকি দুই দিনে কতোটুকু বিক্রি হবে, সেটা বুঝার অপেক্ষা রাখে না। তিনি আরও বলেন, আমাদের শাড়ি বিক্রির অবস্থা এমন পর্যায় দাঁড়িয়েছে যে, স্বাভাবিক বিক্রির চেয়ে কম হচ্ছে।
এমন চিত্র শুধু রাজধানী সুপার মার্কেট, পাটুয়াটুলি কিংবা গুলিস্তান মার্কেটই নয়। রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেটগুলোর অবস্থাই এমন। দক্ষিণবঙ্গের মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম সদরঘাটের লঞ্চঘাট। ঈদ এলে এই ঘাটের কদর আরো বাড়ে। যাত্রাপথে এসব এলাকার মানুষ সদরঘাট কিংবা আশপাশের এলাকার শপিংগুলো থেকে কেনাকেটা করে থাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রায়সাহেব বাজার থেকে শুরু করে বাংলাবাজার ফুটওভার ব্রিজ এবং সেখান থেকে সদরঘাট নৌবন্দরের মূল ফটক পর্যন্ত হকারের দখলে। সেখানে হকাররা ফুটপাতে নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ঈদুল আযহা ঘিরে পরিস্থিতি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর ফলে পথচারীরাও চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। হকারদের হাকডাক আর পণ্য দেখার হিড়িকে সাধারণ পথচারীরা নেমে এসেছেন মূল রাস্তায়।
শরীফ মার্কেটের সামনে হকাররা বাচ্চাদের পোশাক আর বার্মিস স্যান্ডেল বিক্রি করছেন। শরীফ মার্কেটের এক পাঞ্জাবী ব্যবসায়ী জানান, ফুটপাতের দোকানীরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। তার পাশেই লক্ষ্মীবাজার প্রধান সড়ক। সড়কের পাশেই পাল্লা দিয়ে বেড়ে উঠেছে হকারদের উপস্থিতি। চলে বিকেল থেকে রাতঅবধি।
ফুটপাতের কয়েকজন দোকানীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের ব্যবসা গতবারের তুলনায় কমতি নেই। নিয়মিত বেচাবিক্রি করে যাচ্ছেন তারা। তবে এমনই চিত্র গত কয়েকদিন রাজধানীর ফুটপাতগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানি বলেন, মাঝে মাঝে পুলিশ এসে তাদের উচ্ছেদ করে। ক’দিন পরে আবারো যা তাই।
পুরান ঢাকার প্রায় সব ফুটপাতেই ঈদের আমেজ দেখা গেছে। কিন্তু এই আমেজের প্রভাব পড়েছে মার্কেটগুলোতে। যা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেই জানা গেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ফুটে পণ্যের পসরা সাজিয়ে ব্যবসা করছে এসব ফুটওয়ালারা। যার দরুণ আমাদের ওপর পড়ছে এর প্রভাব।
অন্যান্য মার্কেটের মতো টিকাটুলি রাজধানী সুপার মার্কেটের বাহিরেও বসেছে ফুটপাত। তবে এ বিষয়ে মার্কেট কর্তৃপক্ষ অবগত নেই বলে জানান ৩৯ নং ওয়ার্ড স্থানীয় কাউন্সিলয় ও উক্ত মার্কেটের সভাপতি ময়নুল হক মঞ্জু। তিনি বলেন, মার্কেটের ভেতরে যেসব দোকান রয়েছে, সেগুলো নিয়েই আছি। বাহিরে ফুটের বিষয়টা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব থাকায় এ বিষয়ে তিনি অবগত নয় বা তার দায়িত্বের মধ্যে নয় বলে জানান জনপ্রিয় এই জনপ্রতিনিধি।াআস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন