আমাদের দেশে পড়াশোনা শেষ করে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী অপেক্ষা করেন চাকরি বা ব্যবসার জন্য। কিন্তু বর্তমান সময়ে চাকরির বাজারের যা অবস্থা, তাতে মনমতো কিংবা যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিক চাকরি পাওয়া দুষ্কর। তাই এসব চাকরি বা ব্যবসার আশায় না থেকে আমরা যদি নিজেরা নিজেদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য কিছু করি, তাহলে তা একই সঙ্গে নিজেকে যেমন আর্থিক সচ্ছলতা এনে দেবে তেমনি অন্যদের কর্মসংস্থানও হবে তা থেকে। তেমনি একটি আধুনিক আত্মকর্মসংস্থানমূলক পেশা হতে পারে আধুনিক গরুর খামার। আরও বিস্তারিত জানাচ্ছেনÑ আজহারুল ইসলাম অভি
বাংলাদেশে গরুর খামারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে এর বাজার চাহিদাও। একটি আধুনিক গরুর খামার থেকে দুই-তিনটি উপায়ে অর্থ উপার্জন সম্ভব। প্রথমেই দুধের চাহিদা মেটানো যায়, দ্বিতীয়ত আমিষের চাহিদা মেটাতে মাংস এবং জ্বালানি হিসেবে গোবর ও জৈব সার পাওয়া যাবে। তা ছাড়া কোরবানির সময় এই খামার থেকে ভালো দামে গরু বিক্রিও সম্ভব। তবে না জেনে কখনই পেশায় নামা যাবে না। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই এই পেশা ও খামার সম্পর্কে অল্পবিস্তর জ্ঞান থাকতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিতে পারলে।যে কোনো কিছু গড়তে সবার আগে প্রয়োজন প্রাথমিক প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে যে কোনো কাজের সফলতা ও ব্যর্থতা।
আধুনিক খামার গড়ে তুলতে প্রয়োজন আর্থিক জোগান ও জায়গা। প্রথমেই বড় করে এটি শুরু করতে গেলে থাকে ঝুঁকির সম্ভাবনা। ফলে প্রথমে ছোট পরিসরে কাজে হাত দেওয়া ভালো। চার থেকে পাঁচটি গরু নিয়ে যাত্রা করে আস্তে আস্তে এই খামারকে সম্প্রসারণ করাই উত্তম। দুটি গরুর জন্য একজন দক্ষ লোক নিয়োগ করা গেলে ভালো। তবে খেয়াল রাখতে হবে লোকটির গরুর যতœ নেওয়ার পূর্বঅভিজ্ঞতা আছে কিনা। আধুনিক খামার নির্মাণের জন্য একটি ভালো জায়গা নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো এবং দুধ বিক্রির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এসব এলাকার আশপাশেই ডেইরি ফার্ম গড়ে তোলা প্রয়োজন। এই খামারের জন্য জন্য সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে গরুর খাবারের প্রতি। পর্যাপ্ত ও মানসম্পন্ন খাবার না পেলে সঠিক পরিমাণ দুধ পাওয়া যায় না। ধানের কুঁড়া, গমের ভুসি, ছোলা, খেসারির খোসা, লবণ, খৈল, নারিকেলের ছোবড়া, ঘাস-বিচালির পর্যাপ্ত সংগ্রহ রাখতে হবে। অনেক সময় বাসি ও পচা খাবার গরুকে সরবরাহ করা হয়, যা কখনই ঠিক নয়। এতে করে গরু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
লাভ-ক্ষতি : গরুর খামার একটি দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম। এতে সঙ্গে সঙ্গেই লাভ করা যাবে না। গড়ে একটি গরু কিনতে ৩০-৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। এ ছাড়া যত বেশি গরুর সংখ্যা বাড়বে খরচের পরিমাণও তত কমবে। গড়ে একটি গরু থেকে মাসে ৪-৫ হাজার টাকার দুধ বিক্রি করা সম্ভব। যদি পাঁচটি গরু থাকে খামারে, তবে তা থেকে মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা অনায়াসে আয় করা সম্ভব। খরচ বাদে এই লাভ একটি পরিবারের জন্য কম নয়। ১০টি গরু থাকলে প্রতি মাসে খরচের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা, আর প্রতি মাসে দুধ বিক্রি থেকে আসবে কমপক্ষে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে দুধ বিক্রি করে বেশি লাভ করা সম্ভব নয়। এ ব্যবসায় লাভের অংকটা বৃদ্ধি পায় প্রতিবছর গরু যে বাচ্চা দেয় তা থেকে। সে বাচ্চা কোরবানির সময় বিপুল দামে বিক্রি করা যায়। হাতিরঝিলে আর্মি ক্যাম্পের পাশে স্থাপিত আধুনিক খামার এর একটি নমুনা। এতে গত বছর ও কোরবানির সময় ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের কোরবানির গরু বিক্রি হয়েছে।
এ ব্যবসা করার জন্য সরকারিভাবে খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য ছাড়াও ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যুব উন্নয়ন, কৃষি ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকেও প্রশিক্ষিত তরুণরা বিনা জামানতে বেশ মোটা অংকের ঋণ সহায়তা পেতে পারেন। ফলে বেকার শিক্ষিত তরুণদের জন্য এটি হতে পারে একটি চমৎকার পেশা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন