কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম এক লাফে কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর জন্য খুচরা ব্যবসায়ীদের দুষছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চেয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভারতে হঠাৎ বন্যার কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ঈদের পরপরই এ দাম কমে যাবে।
ঠিক ওই দিনই রাজধানীর পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় বাজার শ্যামপুরে অভিযানে নামে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই টিমের প্রধান হিসেবে অংশ নেন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তার সাথে বিস্তারিত কথা হয় পরিবর্তন ডটকমের এ প্রতিবেদকের।
তিনি জানান, বিদেশ থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানির পর ঢাকার বাজার পর্যন্ত আনতে খরচ হয় ২৬ থেকে ২৭ টাকা। কারণ বিদেশ থেকে আনা পেঁয়াজের প্রকৃত দামের সাথে যোগ হয় যানবাহন খরচ, শুল্ক এবং ডলার লেনদেন সংক্রান্ত খরচ। আপনারা জানেন, এর সাথে অফিস খরচও আছে তাদের।
সরকারি এ কর্মকর্তার পর্যবেক্ষণ মতে, ২৭ থেকে ২৮ টাকায় কেনা পেঁয়াজ খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি কেজির উপর মাত্র ৫০ পয়সা লাভ হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়। এখন সেই পেঁয়াজ বাজারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাতে প্রতি কেজি বিদেশি পেঁয়াজের উপর ১০ থেকে ১৩ টাকা পর্যন্ত লাভ করছে এসব খুচরা ব্যবসায়ী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব কামরুজ্জামান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির ঘটনায় আমরা প্রথমে পাইকারি বাজারে অভিযান শুরু করি। কিন্তু সেখানে দেখতে পাই- পাইকারি বাজারে আগের থেকে দাম সেভাবে বাড়েনি। আমরা তখন দেখতে পাই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে খুচরা বাজারে। পাইকারি বাজারিদেরও একই অভিযোগ। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা খুচরা বাজারে অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কাল থেকেই খুচরা বাজারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অভিযান শুরু হবে।
এদিকে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক মো: মোসলেম উদ্দিন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমাদেরকে আগে পেঁয়াজ আমদানিতে কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হতো। অর্থাৎ একটি সীমান্ত পথ দিয়ে নির্দিষ্টসংখ্যক ট্রাক প্রতিদিন ঢুকতো। সেখানে আলাদা আলাদা করে পাথর, চাল, বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বা পেঁয়াজ আমদানি করা হতো। হঠাৎ করে গত কয়েক দিন আগে ঘোষণা আসে এ কোটা পদ্ধতি আপাতত সমন্বয় করা হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক পেঁয়াজের ট্রাক আনা যাবে। এরপর রোববারই দেশের বেনাপোল, সোনা মসজিদ ও মংলা স্থলবন্দর সীমান্ত এলাকা দিয়ে একসাথে প্রায় সাড়ে ছয়শ ট্র্রাক পেঁয়াজ ঢুকেছে। হঠাৎ একসাথে এতো পেঁয়াজ ঢোকার ফলে আমরা এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজের উপর ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যান্ত লোকসানের আশঙ্কা করছি।
এদিকে, রাজধানীর শ্যামবাজারে আড়তদার রফিক ট্রেডার্সের মালিক রফিকুল ইসলাম মল্লিক পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, পেঁয়াজের দাম আমাদের আড়তে খুব একটা বাড়েনি। এটা বাড়িয়েছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের কাছে আমরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৪ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করি। তারা কেন তা ৪০ টাকায় বিক্রি করবে এটা আমার বোধগম্য নয়। তবে যেভাবে এখন কোটা ফ্রি পদ্ধতিতে সীমান্ত দিয়ে পেঁয়াজের ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকছে তাতে আমদানিকারকরা বিপদে পড়ে যাবে। তারা বাধ্য হয়েই অনেক কম দামে পেঁয়াজ ছেড়ে দেবে। একসাথে প্রতিদিন কখনোই ৬০০ ট্রাক পেঁয়াজ আমাদের দেশে দরকার হবে না।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের খুচরা বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং কমিটির প্রধান ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদের ভাষ্য মতেও এসব পেঁয়াজ প্রতি কেজি পাইকারি ক্রয় করতে হয়েছে মাত্র ২৯ থেকে ৩০ টাকা দরে।
তার বক্তব্য, এখানে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীদের ভূমিকাই বেশি।
রাজধানীর মিরপুর-৬ নম্বর কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিদেশ থেকে আমাদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। এ পেঁয়াজ তারা কত টাকায় ক্রয় করেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে পেঁয়াজের খুচরা বিক্রেতা মো: তফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা কিনেছি ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা পর্যন্ত। এখানে আপনারা হয়তো দেখছেন কেজি প্রতি আমরা ১০ টাকা বা তারও অধিক লাভ করছি। কিন্তু কাঁচামালের ক্ষেত্রে সেটা হয় না। বিদেশ থেকে যেভাবে পেঁয়াজ আসে আমরা সেই একই বস্তাই ক্রয় করি। খুচরা বিক্রয় করতে গিয়ে অনেক সময় পচা পেঁয়াজ বের হয়, সেটা তো ঘাটতি হয়। ফলে পেঁয়াজের দাম গোড়ায় (পাইকারি পর্যায়ে) না কমলে আমাদের কিছু করার নেই।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কামরুন্নাহার দাবি করেন, খুচরা পর্যায়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করব। আমার মনে হয় এ অভিযানের পর পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হবে। এ স্বাভাবিক হতে কতদিন সময় লাগবে এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারের এ কর্মকর্তা বলেন, দেখুন আগের মতো দিন আর নেই। আমরা আগে দেখতাম কুরবানিতে ঈদের দিনেই সব মাংস রান্না করা হতো। কিন্তু এখন তা ফ্রিজে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তা টিকবে না। এখন বর্ডার দিয়ে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ ঢুকছে। আশা করি কম সময়ের মধ্যে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন