ইউক্রেন সীমান্তের কাছে পোল্যান্ডের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার খবর নিয়ে আলোচনার জন্য বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন গ্রুপ অব ২০ (জি২০) নেতারা। যদিও একটি জরুরি বৈঠকের পর সম্মেলনের সময়সূচি ব্যাহত হয়েছিল। খবর রয়টার্স, বিবিসি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে বৈঠকের পর বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো মিত্ররা বিস্ফোরণটি তদন্ত করছে। তবে প্রাথমিক তথ্য থেকে জানা গেছে, এটি রাশিয়া থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র নাও হতে পারে।
ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড বলেছে, মঙ্গলবার ইউক্রেনের কাছে পূর্ব পোল্যান্ডে একটি রকেট হামলায় দুজন নিহত হয়েছে এবং মস্কো এটির দায় অস্বীকার করার পরে একটি ব্যাখ্যার জন্য ওয়ারশতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে।
সাত জাতির গ্রুপ (জি ৭), স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং ইইউ নেতারা, যারা বালিতে জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন তারা এ বৈঠকে যোগ দিয়েছেন।
জি ৭ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, ইতালি, ব্রিটেন এবং জাপান।
বৈঠকের পর সাদা শার্ট পরা এবং জি২০ লোগোসহ বেসবল ক্যাপ পরা জি ২০ নেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সংকেত দিতে ম্যানগ্রোভের চারা রোপণের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ই গ্যাংয়ের সাথে দুই ঘণ্টার বৈঠক করেন, যেটা একজন সিনিয়র চীনা অর্থনৈতিক কর্মকর্তার সাথে তার প্রথম ব্যক্তিগত আলোচনা।
বৈঠকের আগে তিনি বলেন, তিনি চীনের নীতি পরিকল্পনা সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টি পেতে এবং দুই দেশের মধ্যে আরও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার দিকে কাজ করার আশা করেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করার জন্য পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন চাপ মঙ্গলবারের আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে। বৈঠেকে অংশগ্রহণকারী অনেকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ বিশ্ব অর্থনীতিকে চাপে ফেলেছে এবং কোল্ড ওয়ার যুগের ভূ-রাজনৈতিক বিভাজনগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করেছে, যখন বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারির সবচেয়ে খারাপ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসছে।
অন্যান্য সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক ফোরামের মতো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা মস্কোর সামরিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জি ২০ শীর্ষ সম্মেলন থেকে বিবৃতি চেয়েছিল।
এদিকে জি ২০ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, ইউক্রেনে একটি যুদ্ধ চলছে, একটি হাইব্রিড যুদ্ধ যা পশ্চিমারা শুরু করেছে এবং বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুতিনের কথার পুনরাবৃত্তি করে তিনি বলেন, সামরিক জোট ন্যাটোর সম্প্রসারণ রাশিয়াকে হুমকি দিয়েছে৷
লাভরভ শীর্ষ সম্মেলনে পুতিনের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি চলে যান। রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আন্তন সিলুয়ানভ।
মঙ্গলবার পোল্যান্ডের ইউক্রেন সীমান্তে পড়া ক্ষেপণাস্ত্রে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এমন সময়ে এই খবরটি এল যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ঢেউ চলছে। কিন্তু এখনো এটা স্পষ্ট নয় যে কী ঘটেছে।
রাশিয়া এর দায় নাকচ করে দিয়েছে। বলেছে, পরিস্থিতি জটিল করতে ইচ্ছাকৃতভাবে উসকানি দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তি বলেছে যে তারা তদন্ত করছেন কিন্তু এখনও দোষ চাপায়নি।
পোলিশ সরকারও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বলেছে যে জরুরি বৈঠকের পর তারা কিছু সামরিক ইউনিট স্থাপন করেছে।
বিবিসির পল অ্যাডামস বলেছেন, এই ঘটনার অনেক সম্ভাব্য ব্যাখ্যা রয়েছে।
পোলিশ খামারগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করার কোনো আগ্রহ নেই রাশিয়ার। তিনি বলেন, যেদিন ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে ধ্বংস করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছিল, এটিও সম্ভব যে সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মধ্যে একটি অবশ্যই ছিটকে গেছে।
এর আগে, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ এজেন্সি এবং কিছু পোলিশ মিডিয়া বলেছিল যে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেন থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে পোল্যান্ডে পড়েছে।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি মস্কোকে পোল্যান্ড আক্রমণ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রিয়া নভোস্তি বলেছে, ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র পোলিশ ভূখণ্ডে আঘাত করেছে।
এসব অভিযোগের কোনোটিই প্রমাণিত হয়নি।
ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, তিনি পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদার সাথে কথা বলেছেন এবং সামরিক জোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
মঙ্গলবার ইউক্রেনে ৯০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহনাতউ বলেছেন, ৭০টিরও বেশি সফলভাবে গুলি করে ভূপাতি করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন