জি-২০ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ভাষণের জবাবে দেশটিজুড়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। সম্মেলনে আসা বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, রাশিয়ার ‘ধ্বংসাত্মক’ যুদ্ধ বন্ধ করার ‘এখনই সময়।’
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে চলছে বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-২০-এর সম্মেলন। আজ মঙ্গলবার সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তিনি সম্মেলন ত্যাগের পরপরই ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রুশ সেনারা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী কিয়েভ, পশ্চিমাঞ্চলের লিভিভ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খারকিভসহ ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহরে ক্ষেপাণাস্ত্র হামলা ও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এসব হামলার পর ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কিয়েভে দুটি আবাসিক ভবনের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন শহরটির মেয়র ভিতালি ক্লিতসচকো। এ হামলায় কিয়েভে একজন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে খমেলনিতস্কি ও ক্রিভি রিহ শহর এবং উত্তরাঞ্চলে চেরনিহিভ শহরেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ক্রিভি রিহের গভর্নর জানিয়েছেন, রাশিয়ার বিমানবাহিনীর টিইউ-৯৫ বোমারু বিমান থেকে তার শহরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
এদিকে লিভিভ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর দিয়েছেন শহরটির মেয়র আন্দ্রি সাদোভি। বার্তা আদানপ্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে এক পোস্টে তিনি বলেছেন, হামলায় শহরের একাংশ বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ সময় সবাইকে নিরাপদে সরে যেতে বলেন তিনি।
হামলা হয়েছে খারকিভ ও ঝিতোমির শহরেও। খারকিভের মেয়র ইগর তেরেখভ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, হামলায় কতজন হতাহত হয়েছে, তা জানা যায়নি। হামলায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বাধা পড়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে খেরসন শহরের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর আজ প্রথম বড় আকারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল রাশিয়া। হামলায় ৭০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপদেষ্টা ইউরি সাক।
এদিকে ইন্দোনেশিয়ায় জি-২০ সম্মেলনে অনলাইনে ভাষণ দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার ভাষণের জবাব হিসেবে মস্কো এ হামলা চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের প্রধান আন্দ্রি ইয়েরমাক।
রাশিয়ার আজকের হামলার বিষয়ে টুইটারে আন্দ্রি ইয়েরমাক বলেন, ‘কেউ কি মনে করে রাশিয়া আসলেই শান্তি চায়? ক্রেমলিন আসলে চায় আনুগত্য। তবে শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা সব সময় পরাজিত হয়।’ রাশিয়া শান্তি না চাইলে ইউক্রেনও যুদ্ধ চালিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
জি-২০ সম্মেলনে রাশিয়ার ‘ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ’ বন্ধে বিশ্বনেতাদের কাছে আহ্বান জানান জেলেনস্কি। এ সময় তিনি জি-২০ জোটের ২০টি দেশ থেকে রাশিয়াকে বাদ দিয়ে এ জোটকে জি-১৯ বলে উল্লেখ করেন।
তবে যুদ্ধ বন্ধে বেশ কয়েকটি শর্তের কথা জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট । তিনি বলেছেন, রাশিয়াকে অবশ্যই ইউক্রেনের অখণ্ডতার নিশ্চয়তা দিতে হবে। ইউক্রেন থেকে সেনাদের প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং ইউক্রেনের যে ক্ষতি তারা করেছে সেটির ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এছাড়া যতদিন ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট থাকবেন ততদিন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা করবেন না বলে ডিক্রি জারি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমিরি জেলেনস্কি। আর জেলেনস্কির এমন কঠিন শর্তকে রাশিয়া শান্তি আলোচনার ‘অন্তরায়’ হিসেবে দেখছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
তিনি বলেন, ইউক্রেন আলোচনা করার জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে এগুলো অবাস্তব। মঙ্গলবার জি-২০ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
লাভরভ বলেন, ‘সব সমস্যা ইউক্রেনের দিকে, তারা খোলাখুলিভাবে আলোচনায় বসার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছে এবং শর্ত জুড়ে দিচ্ছে, যেগুলো আসলে অবাস্তব।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন