গণতন্ত্রের দাবিতে আফ্রিকার দেশ সুদানে রাস্তায় নেমে এসেছে লাখো মানুষ। বিক্ষোভকারীরা ২০১৯ সালে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহতদের বিচার এবং দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানান। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীদের উপরে গুলি চালিয়েছে দেশটির পুলিশ। এতে অন্তত ৮ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
নিহতদের ৭ জনকেই বুকে ও মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী- রাজধানী খার্তুম, এবং দ্বিতীয় প্রধান শহর ওমদুরমানসহ বেশ কয়েকটি শহরের রাজপথে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় দেশটির সরকার। বড় ধরনের বিক্ষোভের আশঙ্কায় প্রধান শহর গুলোর সংযোগ সড়কও বন্ধ করে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।
গত বছরের অক্টোবরে সুদানে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে বর্তমান সামরিক শাসকরা। এই অভ্যুত্থানের পর এটাই সবচেয়ে বড় ধরনের আন্দোলন। এই আন্দোলন দমনে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। মিডল ইস্ট আই-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বৃহস্পতিবারে গুলিতে নিহতদের সহ এপর্যন্ত দেশটিতে মোট ১১১ গণতন্ত্রপন্থি নিহত হলো। বিক্ষোভকারীরা সেনাশাসকের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। রাজপথে টায়ার জ্বালিয়ে ও পাথর দিয়ে অবরোধ করছেন সড়ক।
বৃহস্পতিবার খার্তুমে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। এ সময়ই নির্বিচারে গুলি চালানো হয় মিছিলে। নিহতদের মধ্যে একজন কিশোরও রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন শতাধিক।
সুদানের বিভিন্ন অংশ থেকেই সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েক মাসের মধ্যে এবারই সবথেকে বড় বিক্ষোভ দেখা গেলো সেখানে। বিক্ষোভ দমনে সরকারও মরিয়া। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিক্ষেপ করা হচ্ছে জলকামান, টিয়ার গ্যাস ও ফাঁকা গুলি। এতে ওমদুরমান শহরে ৪ জন, খার্তুমে ১ জন ও বাহরি শহরে ২ জন প্রাণ হারান। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে অনেকে।
মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, আহতদের যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানেও টিয়ার গ্যাস হামলার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আন্দোলনকারীরা রাজধানীতে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের থামাতে রাজধানীর সংযোগ সেতুগুলোতে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। সেখানেও সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে।
সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুতদের দলগুলো এক হয়ে ‘ফোর্সেস ফর ফ্রিডম এন্ড চেঞ্জ’ নামের একটি সংগঠন তৈরি করেছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতায় ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সেনা শাসনের অবসান ঘটানো। বৃহস্পতিবারের সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, প্রয়োজনে আমরা মরে যাব কিন্তু সেনাবাহিনীকে আমাদের শাসন করতে দেব না।
১৯৮৯ সালের ৩০ জুন এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সুদানের ক্ষমতায় এসেছিল স্বৈরশাসক ওমর আল-বশীর। এরপর দীর্ঘ তিন দশক তিনি সুদানের শাসক ছিলেন। সেই দিনকে মাথায় রেখেই ৩০ জুন দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করে বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে অনলাইনে সরকারবিরোধী জনমত রুখতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে সুদানের সামরিক সরকার। দুটি বেসরকারি টেলিকম কোম্পানি গণমাধ্যম গুলোকে জানিয়েছে, তাদেরকে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এমনকি সুদানের অভ্যন্তরে ফোনালাপও করা যাচ্ছে না। সব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেই বিশাল সমাবেশের ডাক দেয় আন্দোলনকারীরা।
সুদানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জাতিসংঘের প্রতিনিধি ভল্কার পার্থেস সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান। অপরদিকে খার্তুমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে বেসামরিক নাগরিকের জীবন রক্ষার আহ্বান জানানো হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন