বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের বিজেপিশাসিত ত্রিপুরায় গত ৭ দিন ধরে দোকানপাট, বাড়িঘর ও মসজিদে হামলা চালাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। উত্তর ত্রিপুরার পানি-সাগর এলাকায়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ‘হুংকার সমাবেশে’ জড়িত দুষ্কৃতীরা মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের দোকান ও বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ও ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীদের হামলার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে।
মঙ্গলবার হিন্দি গণমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুমরো’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুসলমানদের ওপর ক্রমাগত একতরফা হামলার ব্যাপারে পুলিশ এখনো কোনো দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়নি। এ সব হামলায় পুলিশের নীরব দর্শক হয়ে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। গত ৭ দিনে রাজ্যের পাঁচটি জেলায় ১২টি মসজিদ ভাঙচুর, মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত এবং অনেক মসজিদে ধর্মীয় কিতাবপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
হিন্দি গণমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুমরো’ যখন পানিসাগরের বিজেপি বিধায়ক বিনয় ভূষণ দাসের সাথে ওই ঘটনা এবং অগ্নিসংযোগের বিষয়ে কথা বলে, তখন তিনি ঘটনাটি স্বীকার করে নেন। পানিসাগরের বিজেপি বিধায়ক বিনয় ভূষণ দাস ‘ইন্ডিয়া টুমরো’কে বলেন, ‘ঘটনাটি জানার সাথে সাথে আমি পুলিশকে বিষয়টি আমলে নিতে বলেছি এবং আমার বিজেপি কর্মীদের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছি।’ তিনি বলেন, যা ঘটছে তা ঠিক নয়, আমি এই ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি, এটা কারও সঙ্গে হওয়া উচিত নয়।
ওই ঘটনায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা প্রসঙ্গে স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক বিনয় ভূষণ দাস বলেন, ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদের র্যালি হয়েছে কিন্তু এই ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে আমি জানি না।’ স্থানীয় বাসিন্দারা ‘ইন্ডিয়া টুমরো’কে বলেছেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপরে সুপরিকল্পিতভাবে হামলা হয়েছে। প্রথমে র্যালি করা হচ্ছে, তারপরে হামলা চালানো হচ্ছে। আজও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে ‘হুংকার র্যালি’ বের করা হয়, যার প্রস্তুতি চলছিল গত শুক্রবার থেকে।
গত এক সপ্তাহ ধরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো সংখ্যালঘুদের ইবাদতগাহ, মসজিদ, সম্পত্তি ও দোকানপাটকে টার্গেট করার খবর আসছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ভিত্তিতে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
উত্তর ত্রিপুরার পানিসাগর এলাকায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হুঙ্কার সমাবেশে জড়িত দুষ্কৃতীরা মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের দোকান, বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ। ত্রিপুরার চার থেকে পাঁচটি জেলা হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে, যার মধ্যে উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর টাউন এবং পানিসাগর টাউন, গোমতী জেলার মহারানী কাকরবন উদয়পুর, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার চন্দ্রপুর ও রামনগর, উনকোটি জেলার কৈলাশহর, রাতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ‘ইন্ডিয়া টুমরো’র সাথে ওই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে, উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর বিধানসভার সাবেক বিধায়ক এবং সিপিআইএম নেতা অমিতাভ দত্ত ঘটনাটিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেছেন এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলার নিন্দা করেছেন।
সিপিআইএম নেতা এবং উত্তর ত্রিপুরার কদমতলা-কুর্তি বিধানসভার বিধায়ক, ইসলামউদ্দিন বলেন, পুলিশ এখনও দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ ব্যাপারে ত্রিপুরা পুলিশ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না এবং বেশিরভাগ নম্বরে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। গত সাতদিন ধরে ওই ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন