পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নতুন রাজ্য সরকারের বয়স মাত্র দুই সপ্তাহও পূর্ণ হয়নি, এর মধ্যেই তৃণমূলের প্রথম সারির দুই মন্ত্রীসহ ৩ নেতাকে গ্রেপ্তার করে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)। জানানো হয়, ২০১৬ সালের আলোচিত নারদ কেলেঙ্কারির মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন রাজ্য সরকারের মন্ত্রী কলকাতার সাবেক মেয়র ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও সাবেক মন্ত্রী নির্বাচিত বিধায়ক মদন মিত্র। তাদের সঙ্গেই গ্রেপ্তার করা হয় গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে তণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কলকাতা পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও। এ নিয়ে গতকাল দিনভর রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল উত্তপ্ত। সারাদিনের বহু নাটকীয়তার পর অবশেষে স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে চারজনকেই অন্তর্বর্তী জামিন দেয় সিবিআই আদালত। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এটি রীতিমতো কেন্দ্রীয় সরকারের যুদ্ধ ঘোষণা। মমতার নতুন সরকার যেন উঠে দাঁড়াতেই না পারে সে জন্য মোদি সরকার আঘাত হেনেছে। মূলত বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের ঝাল মেটাতে এ কাজ করা হয়েছে। আবার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চার গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গ্রেপ্তার করে মোদি সরকার মূলত মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে এই বার্তাই পৌঁছাল যে, নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও রাজনৈতিক শত্রুতার এখনো শেষ হয়নি।
আনন্দবাজার পত্রিকাসহ রাজ্যের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে ফিরহাদ হাকিমের বাসভবন ঘিরে ফেলে সিবিআই পুলিশ। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তৃণমূল সমর্থকরা বাড়ির সামনে জড়ো হলে ফিরহাদ তাদের বলেন, ‘আদালতেই সব মোকাবেলা হবে। এর মধ্যেই খবর পাওয়া যায় আরেক মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়সহ অন্য নেতাদের গ্রেপ্তারের।
খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছুটে যান ফিরহাদের বাড়িতে। সেখান থেকে সোজা নিজাম প্যালেসে সিবিআই কার্যালয়ে। সেখানে সিবিআই কর্মকর্তাদের মমতা চার নেতার গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বৈধতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। এক সময় তিনি বলেন, ‘আমাকেও গ্রেপ্তার করুন’। সিবিআই বিশেষ আদালতে শুনানির পুরো সময়টা সেখানে উপস্থিত ছিলেন মমতা। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ভার্চুয়াল শুনানি শেষ হলে পৌনে ৫টার দিকে নিজাম প্যালেস থেকে বেরিয়ে আসেন মমতা। তখন জানা যায়, বিচারক অনুপম মুখোপাধ্যায় গ্রেপ্তারকৃত চারজনেরই অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেছেন। ৫০ হাজার টাকার বন্ডে তাদের জামিন দেওয়া হয়েছে। তবে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যেতে পারে সিবিআই।
এদিকে গতকাল সিবিআইকা- নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল উত্তপ্ত। রাজ্যজুড়ে চলা লকডাউন ভেঙেই বিভিন্ন জেলায় শুরু হয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ। কলকাতায় রাজ্যপালের কার্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘেরাও করে শুরু হয় সহিংসতা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সংঘর্ষেরও ঘটনা ঘটে।
হঠাৎ করে রাজ্যের চার গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গ্রেপ্তার নিয়ে ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ উগড়ে দেন অনেকে। খোদ নারদকা-ে ২০১৭ সালে জনস্বার্থে মামলাকারী কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এফআইআরে যাদের নাম রয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিক সিবিআই। রাজ্য সরকার যদি ঠিক মতো তদন্ত করত এবং ঠিক সময়ে এফআইআর করত তবে আমাকে আদালতের কাছে সিবিআই তদন্তের আবেদন করার দরকার পড়ত না। অবাক হয়ে দেখলাম, কলকাতা হাইকোর্টের দেওয়া সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে রাজ্য সরকার চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গেল। সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকেই বহাল রাখল। এক জন আবেদনকারী হিসেবে সঠিক বিচার আশা করব এবং একই সঙ্গে অন্য যাদের নাম এফআইআরে আছে তাদের বিরুদ্ধেও সিবিআই একই ভাবে চার্জশিট দেবে সেই আশা করছি।’
তবে রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর আইনের প্রতি আস্থা নেই বলেই এ নিয়ে গ-গোল পাকাচ্ছেন। তবে এই নারদকা-ে আরও দুই আলোচিত নামও রয়েছে। তারা হলেন এক সময়ের তৃণমূল নেতা, কিন্তু বর্তমানে বিজেপির ‘আলোকিত মুখ’- তাদের একজন শুভেন্দু অধিকারী, অন্যজন মুকুল রায়। একই মামলায় ফিরহাদদের আটক করা হলেও শুভেন্দু-মুকুলকে কেন আটক করছে না সিবিআই? এই প্রশ্নে চুপ রয়েছে বিজেপি।’
২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে নারদা নিউজ ডটকম নামে একটি পোর্টাল চাঞ্চল্যকর ভিডিও ফাঁস করে, যাতে দেখা যায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতারা ঘুষ নিচ্ছেন। এ ঘটনা সেই সময় তোলপাড় তুলেছিল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন