যুক্তরাষ্ট্রের মিনোসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরের কাছে ব্রুকলিন সেন্টার এলাকায় পুলিশের গুলিতে ২০ বছর বয়সী এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ নিহতের ঘটনায় গোটা দেশ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হচ্ছে। ব্রুকলিন সেন্টারে কারফিউ জারি করা হয়েছে। নিহত কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের নাম দান্তে রাইট।
স্থানীয় পুলিশপ্রধান বলছেন, ওই কৃষ্ণাঙ্গ তরুণকে ‘দুর্ঘটনাবশত’ গুলি করা হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার সকালে পুলিশপ্রধান টিম গ্যানন সাংবাদিকদের বলেন, দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা হাতে থাকা পিস্তলকে স্ট্যানগান ভেবে ভুল করে গুলি ছোড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তার শরীরে থাকা ক্যামেরার ফুটেজ দেখানো হয়। সেখানেও তেমনটিই দেখা গেছে। রাইজ জোর করে গাড়িতে ঢুকে বসে পড়েন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে গুলি ছোড়া হয়। এসময় ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা ‘টেজার টেজার টেজার ‘ বলে দান্তে রাইটকে সতর্ক করছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ট্রিগারে চাপ দেন।
গুলি করার সঙ্গে সঙ্গেই ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা নিজের ভুল বুঝতে পেরে আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি তাকে গুলি করে হত্যা করে ফেলেছি।’
গেল বছরের ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর মিনিয়াপোলিসে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনায় গোটা বিশ্ব প্রতিবাদে এক হয়েছিল।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গেল বছরের মে মাসে জর্জ ফ্লয়েডকে যে স্থানটিতে হত্যা করা হয়েছিল, সেখান থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে এবার দান্তে রাইকে গুলিকে হত্যা করলো পুলিশ। দান্তের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে পুলিশ। স্থানীয় সময় রবিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর শহরটিতে পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়।
কৃষ্ণাঙ্গ যুবক দান্তে হত্যার প্রতিবাদে রবিবার রাতেই কয়েকশো বিক্ষুব্ধ জনতা ব্রুকলিন সেন্টার পুলিশ বিভাগ ভবনের বাইরে জড়ো হয়। এসময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে দাঙ্গা পুলিশ রাবার বুলেট ছোটে এবং রাসায়নিক দ্রব্যের ধোঁয়ার সৃষ্টি করে।
সোমবার বিক্ষোভ চলাকালে ব্রুকলিন সেন্টারের মেয়র কারফিউ জারি করে বিক্ষোভকারীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রায় ১১ মাস আগে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনায় হত্যাকারী পুলিশ কর্মকর্তার বিচার নিয়ে মিনিয়াপোলিস এমনিতেই অগ্নিগর্ভ হয়ে আছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরেদ দমাতে দাঙ্গা পুলিশ রাস্তায় নামলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। জনতা পুলিশের দুটি গাড়ির ওপর ইট-পাটকেল ছুড়ে। বিক্ষোভকারীরা এসময় দান্তে রাইটের স্মরণে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভের সময় কিছু দোকানপাটে লুটপাট শুরু হলে মেয়র শহরে কারফিউ জারি করেন।
হত্যাকাণ্ডের পর নিহত দান্তের মা ক্যাটি রাইট ঘটনাস্থলে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, রবিবার বিকেলে দান্তে তাকে ফোন দিয়ে বলেছিল, পুলিশ তার গাড়ি থামিয়েছে। কারণ, দান্তের গাড়ির রিয়ার ভিউ মিরর (পেছনে দেখার আয়না) থেকে এয়ার ফ্রেশনারের ক্যাল ঝুলছিল, যা মিনেসোটার আইনে অবৈধ। তিনি শুনতে পাচ্ছিলেন, পুলিশ তার ছেলেকে গাড়ি থেকে বের হতে বলছিল।
সন্তান হারানোর শোকে কাঁদতে কাঁদতে দান্তের মা আরও বলেন, ‘আমি ধস্তাধস্তির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। পুলিশ কর্মকর্তাদের বলতে শুনেছি, ‘দান্তে, দৌড়িও না’। ফোন কেটে গেলে ছেলের নাম্বারে আবার ফোন দিই। ছেলের বান্ধবী ফোন রিসিভ করে জানায়, দান্তে আর বেঁচে নেই।’
এরইমধ্যে মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তিনি ব্রুকলিন সেন্টারে বিক্ষোভের খবরাখবর রাখছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আরও এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক নিহতের ঘটনায় পুরো অঙ্গরাজ্যে শোকের হাওয়া বিরাজ করছে।
ব্রুকলিন সেন্টার পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করায় রবিবার দুপুর ২টার একটু আগে এক ব্যক্তির গাড়ি থামায় পুলিশ। পরে পুলিশ দেখতে পায় ওই ব্যক্তির নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে চাইলে তিনি গাড়িতে ফিরে যান। এসময় এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে গুলি করে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন