ভারতের ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্রাক্টর র্যালি থেকে সৃষ্ট দাঙ্গার পর আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে দেশটির সরকার। দাঙ্গার কয়েকঘন্টার মধ্যেই কৃষকদের দিল্লিছাড়া করেছে পুলিশ।
ধরপাকড়-আটক- টহলে রীতিমত থমথমে অবস্থা দিল্লির। মুম্বাই, হরিয়ানা ও পাঞ্জাব সীমান্তে আরও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
দাঙ্গায় এক কৃষকের প্রাণহানির পাশাপাশি অন্তত ৩০০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ২২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটক হয়েছেন ২০০ কৃষক। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে পুরো দিল্লিজুড়ে। মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক। সিএনএন, এএফপি।
ট্রাক্টর মিছিল থেকে আটটি বাস ও ১৭টি ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর করে কৃষকরা। কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে নভেম্বরের শেষ থেকেই দিল্লি সীমানায় আন্দোলন করছেন হাজারো কৃষক। এতদিন তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণই ছিল।
প্রজাতন্ত্র দিবসের বিক্ষোভে রাজধানীর কোনো পথে মিছিল যাবে তা নিয়েও পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছিল কৃষক নেতাদের। ট্রাক্টর নিয়ে লালকেল্লা যাওয়ার অভিপ্রায় নেই বলে আগেই জানিয়েছিলেন নেতারা। কিন্তু প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্রাক্টর র্যালি রাস্তায় নামতেই পরিস্থিতি বদলে যায়।
বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড ভাঙা নিয়ে সংঘর্ষ হয় পুলিশের সঙ্গে। চলে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জ। পালটা মারমুখী হয়ে ওঠে আন্দোলনকারীদের একাংশ। একটি দল পৌঁছে যায় লালকেল্লাতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তবে কৃষকদের লালকেল্লা দখলের পরিকল্পনা ছিল না।
এটি রাগের বহিঃপ্রকাশ বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন গায়ক কৃষক আন্দোলন জমিয়ে তোলা গায়ক দীপ সিধু। বিশ্লেষকরা বলছেন, কৃষক আন্দোলন ও দাঙ্গা বিজেপি সরকারের ওপর বাড়তি চাপ হয়ে এসেছে।
আন্দোলনকারীদের সংযত হওয়ার আবেদন করে সীমানায় ফিরে যেতে বলেছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীসহ অনেকে। কিন্তু ট্রাক্টর র্যালিতে অংশ নেওয়া অনেকের হাতে তলোয়ার ও অন্যান্য দেশি অস্ত্র ছিল। ব্যারিকেড ভাঙার সময় সেগুলো নিয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে যায়। আন্দোলনকারীরা কারও কথাই শুনছিল না।
কৃষকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে পাঞ্জাবি গায়ক-অভিনেতা দীপ সিধুর বিরুদ্ধে। তিনি দাবি করেছেন, পরিকল্পনা ছিল না লালকেল্লা দখলের। রাগের বহিঃপ্রকাশে হঠাৎ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি বলেন, ‘একজনের পক্ষে কি লাখ লাখ কৃষককে উত্তেজিত করা সম্ভব? আমি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম মাত্র।’ চলমান কৃষক আন্দোলন ও সর্বশেষ দাঙ্গা-হাঙ্গামাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কৃর্তত্ববাদী বিজেপি সরকারে ওপর বাড়তি চাপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২০১৪ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকা মোদি সরকার এর চেয়ে বড় চাপে আগে পড়েনি। সুপ্রিমকোর্টও কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে বলেছেন সরকারকে।
দমছে না নেতারা এবার লক্ষ্য সংসদ ভবন
প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে তুলকালাম কাণ্ডের পরও কিছুতেই দমছেন না কৃষক নেতারা। নতুন তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতেই অনড় কৃষক সংগঠনগুলো। পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট ঘোষণার দিন (১ ফেব্রুয়ারি) কৃষকরা সংসদ অভিযানে যাবেন বলেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রায় দুমাস ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানোর পরে মঙ্গলবার রাজধানীর বুকে যেভাবে বেনজির তাণ্ডব চালিয়েছেন কৃষকরা, তাতে রীতিমতো চাপে পড়ে যান কৃষক সংগঠনের নেতারা।
পালটা বিবৃতি দিয়ে সংযুক্ত কিষান মোর্চা দাবি করে, অশান্তির পেছনে রয়েছে সমাজবিরোধীরা। কৃষকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কলুষিত করতেই এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন কৃষক নেতারা। ঘটনার নিন্দাও করেছেন তারা। প্রথম থেকেই কৃষকরা
দাবি করেছিলেন, আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তারা দিল্লি সীমান্ত থেকে ফিরবেন না। কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে চাপে পড়লেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। তারা মনে করছেন, হিংসা ছড়িয়ে কৃষক আন্দোলনের ঝাঁজ কমানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তাই এখন পিছিয়ে গেলে সরকারেরই জয় হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন