করোনাভাইরাস মহামারিতে অন্য খাতগুলো ধুঁকলেও রীতিমতো জাদুর কাঠির ছোঁয়া লেগেছে ডিজিটাল ব্যবসায়। হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফুলেফেঁপে উঠেছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থভাণ্ডার। সীমান্তহীন এ ব্যবসায় মালিকপক্ষের পকেট ভরলেও অনেকটা বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে ব্যবসায়িক অঞ্চল বা ভোক্তা দেশগুলো। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে ডিজিটাল ব্যবসায় শুল্ক আরোপ করছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, তথা আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো।
থাইল্যান্ড থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার সরকারগুলো হয় ইতোমধ্যেই নতুন শুল্ক আরোপ করেছে, নাহয় আরোপের পথে রয়েছে। ৬৫ কোটি জনসংখ্যার এ অঞ্চলে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এককভাবে যে মুনাফা নিয়ে যাচ্ছিল, সেখানে ভাগ বসাতে চলেছে দেশগুলো।
ইতোমধ্যে ইউরোপের বেশ কিছু দেশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ডিজিটাল পরিষেবা কর চালু করেছে। চলতি সপ্তাহে মার্কিন টেক জায়ান্টদের নতুন ডিজিটাল কর পরিশোধ করতে অনুরোধ জানিয়েছে ফ্রান্স।
বহুজাতিক ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে কর পরিশোধ করবে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক শুল্ক আইন সংশোধনের চেষ্টা করছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন সংস্থা ওইসিডি।
কর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করপোরেট আয়কর মূল্যায়ন হয় সাধারণত যেখানে কোনও সংস্থার শারীরিক উপস্থিতি থাকে সেখানে, বিদেশি বাজারগুলোতে নয়। এর ফলে একটি বৈষম্যমূলক বাজার তৈরি হয়, যেখানে স্থানীয় ডিজিটাল ব্যবসায়ীদের কর দিতে হলেও নিয়মের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায় বিদেশিরা।
এ সংকট নিরসনে ওইসিডি ১৩০টির বেশি দেশকে নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির চেষ্টা করলেও ইতোমধ্যে এশিয়ার কিছু দেশ তাদের নিজস্ব নীতি কার্যকর করেছে।
jagonews24
যেসব বিদেশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর স্থানীয় কোনও সহায়ক সংস্থা নেই এবং বছরে ৫৭ হাজার ডলারের বেশি আয় করে, তাদের জন্য ৭ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপ করেছে থাইল্যান্ড। এ থেকে দেশটি বার্ষিক ৯৬ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করবে বলে জানিয়েছে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মেব্যাংক কিম এং।
ইন্দোনেশিয়ায় গত আগস্টে অনেকটা একইভাবে ১০ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে ডিজিটাল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর।
সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়াতে এবছরই বিদেশি ডিজিটাল ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হয়েছে। এক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে স্থানীয় ভোক্তাদের জন্য ডিজিটাল সেবা আমদানিকারকদের। আর যেসব বিদেশি সরবরাহকারীর বার্ষিক আয় ১ লাখ ২০ হাজার ডলারের বেশি, তাদের ওপর ৬ শতাংশ পরিষেবা কর বসিয়েছে মালয়েশিয়া।
গত মে মাসে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, নেটফ্লিক্সের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুল্ক দিতে বাধ্য করার বিষয়ে নতুন বিল এনেছে ফিলিপাইন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া ওই অর্থ করোনা মহামারি মোকাবিলায় ব্যয় করার প্রস্তাব দিয়েছিল দেশটি।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ডিজিটাল ব্যবসায় শুল্কারোপের বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনও মন্তব্য করেনি গুগল ও ফেসবুক। তবে চীনা জায়ান্ট আলিবাবার মালিকানাধীন আঞ্চলিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম লাজাদা বলেছে, তারা ডিজিটাল কর দেয়ার বিষয়ে স্থানীয় আইনপ্রণেতা এবং সরকারি সংস্থাগুলোকে সহায়তা করবে।
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন