মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দাখিল করা কাগজপত্রের সঙ্গে গাম্বিয়া ডকুমেন্ট যুক্ত করেছে।
শুক্রবার দেশটি আগের ৫০০০ পৃষ্ঠার সঙ্গে আরও ৫০০ পৃষ্ঠার নতুন এ ডকুমেন্ট যুক্ত করে। নতুন এই ডকুমেন্টে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার প্রমাণ রয়েছে।
মিয়ানমার কীভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা সংঘটিত করছে তার তথ্য-উপাত্তও সেখানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ফরটিফাই রাইটসের ওয়েবসাইটে শুক্রবার এক বিবৃতিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ওই বিবৃতিতে সংগঠনটির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, মিয়ানমার সরকারকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় মেনে নিয়ে রাখাইনে নিষ্ঠুরতা বন্ধ করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচারের পক্ষে শুক্রবার থেকে নতুন পদক্ষেপ শুরু হল। আইসিজের মতো আন্তর্জাতিক বিচার সংস্থার কাছে মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে ও জবাবদিহিতা করতে হবে।
২০১৯ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে গাম্বিয়া। শুক্রবার গাম্বিয়ার দাখিল করা রোহিঙ্গা গণহত্যা সংক্রান্ত ডকুমেন্টের জবাবে আগামী বছরের ২৩ জুলাই মিয়ানমার সরকার তাদের পাল্টা বক্তব্য উপস্থাপন করবে। আইসিজে ও আইসিসির বিচার কাজ পর্যবেক্ষণ করছে ফরটিফাই রাইটস।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইনের প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রোষানলের শিকার হয়েছে। রাখাইনে মিয়ানমার যে গণহত্যা চালিয়েছে তা প্রত্যক্ষ করেছে রোহিঙ্গারা।
চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বিচার আদালত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনে। তারা মিয়ানমার সরকারকে গণহত্যা বন্ধে সবরকমের পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানায়। রাখাইনে খুন এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
ফরটিফাই রাইটস বলছে, আইসিজে গণহত্যার অভিযোগ আনার পরও মিয়ানমার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, নির্যাতন, গুম চলতেই থাকে। রাখাইনে ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে এখন ২০টি ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর প্রতিনিয়ত চলছে নির্যাতন।
২২ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের রাপোর্টিয়ার থমাস অ্যান্ড্র–জ রোহিঙ্গা ধ্বংসপ্রাপ্ত কানকিয়া গ্রামের ছবি তুলে ধরেন। সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মূল অভিযানের চিত্র স্পষ্ট ফুটে ওঠে।
চলতি বছরের জুলাইয়ে মিয়ানমারের দুই সেনা রাখাইনে হত্যাযজ্ঞের স্বীকারোক্তি দেয় একটি ভিডিওতে। তারা সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা নির্মূল অভিযানের ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
ভিডিওটি ফনটিফাই রাইটসের হাতে রয়েছে। মিয়ানমারের ওই দুই সেনা সদস্য আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে আসেন এবং ৮ সেপ্টেম্বর তাদের হেগের আইসিসিতে স্থানান্তর করা হয়।
বর্তমানে তারা সেখানেই রয়েছেন। হেগে স্থানান্তরের আগে বাংলাদেশ ওই সেনাদের বিবৃতি সংগ্রহ করে যা গাম্বিয়ার আইনি দল আইসিজের আদালতে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করবে বলে বলা হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন