সুরেন্দ্র কুমার বলেন, ৩০ দিন ধরে রায় লিখেছি। এমনকি, ঘুমের মধ্যেও সাক্ষ্য শুনতে পেতাম
বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় বুধবার ৩২ জন মূল অভিযুক্তের সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন বিচারক সুরেন্দ্র কুমার যাদব৷ এ দিনই তিনি অবসরে যান। তবে সেখানে রয়েছে অন্য ঘটনা।
ভারতীয় গণমাধ্যমের ভাষ্যে, বুধবার নয় বিচারক যাদবের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু বাবরি মামলার শুনানি অসম্পূর্ণ রেখে অবসর নিতে চাননি তিনি।
চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর আরজি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে। তার যুক্তি ছিল, নতুন বিচারকের হাতে বাবরি ধ্বংস মামলার ভার দেওয়া হলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে শুনানি পর্ব। তাতে সময় নষ্ট হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে টানা চার বছর ধরে তিনিই মামলার শুনানি করছেন, এই অবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় তিনি নিজেই দিয়ে যেতে চান, তাই তার কর্মজীবনের মেয়াদ বাড়ানো হোক—এমনই ছিল সুরেন্দ্রর আরজি।
সাম্প্রতিক ভারতে এমন আবেদনের নজির নেই বললেই চলে। কিন্তু সুরেন্দ্রর আবেদন মেনেও নেয় শীর্ষ আদালত, কর্মজীবনের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয় এক বছর। না হলে হয়তো অন্য কোনো বিচারক রায় পড়ে শোনাতেন বা পিছিয়েই যেত রায় ঘোষণা!
৫ বছর ৩৬ দিন মামলা সামলেছেন তিনি। ‘ঐতিহাসিক’ রায় দিয়ে অবসর নেওয়ার পর এদিন কী বলেছেন সুরেন্দ্র? তার কথায়, “মামলাটা ছিল অত্যন্ত জটিল। প্রবল সংবেদনশীলও বটে। একে প্রচুর তথ্যপ্রমাণ, অসংখ্য সাক্ষী, তার ওপর রাজনৈতিক রং। বাদী-বিবাদী দু’পক্ষই প্রচুর খেটেছে। কিন্তু বিচারককে রায় দিতে হয় তার কাছে দাখিল করা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। খবরের কাগজে কী লিখল বা লোকে কী ভাবল, তার ওপর ভিত্তি করে নয়। আইনের চোখে বস্তুনিষ্ঠভাবে দেখে যা মনে হয়েছে, তাই প্রতিফলিত হয়েছে রায়ে।”
কিন্তু আপনার রায় নিয়ে তো সমালোচনা হচ্ছে যথেষ্ট? সুরেন্দ্র তা গায়ে মাখতে রাজি নন। বলেন, “আমি তথ্যপ্রমাণ বারবার খুঁটিয়ে দেখেছি, এমনকি একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। ৩৫১ জন সাক্ষীর বিবৃতি বারবার পড়ে দেখেছি। ৩০ দিন ধরে রায় লিখেছি। এমনকি, ঘুমের মধ্যেও সাক্ষ্য শুনতে পেতাম!”
সুরেন্দ্র জন্মসূত্রে উত্তর প্রদেশেরই ভূমিপুত্র, অযোধ্যা থেকে ১৩৮ কিলোমিটার দূরের জৌনপুর জেলায় জন্ম তার৷ অতিরিক্ত মুনসেফ হিসেবে কর্মজীবনের প্রথম পোস্টিং ছিল অযোধ্যায়। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর যখন গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বাবরি মসজিদ, মুনসেফ সুরেন্দ্র সেদিন ছিলেন অযোধ্যাতেই। তখন বোঝা যায়নি তিনিই একদিন বাবরি ধ্বংস মামলার রায় দেবেন!
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন