ভারতের অযোধ্যায় শতবর্ষ পুরোনো ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ।
মসজিদটি ধ্বংসের প্রায় ২৮ বছর পর বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এ রায় ঘোষণা করবেন লখনৌয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত।
বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদ মামলা অভিযুক্তদের তালিকায় ক্ষমতাসীন বিজেপির অনেক জেষ্ঠ্য নেতার নাম রয়েছে। আজ ভারতের মুসলিমরা ওই মামলার রায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।
এ মামলায় মোট ৪৯ জনকে অভিযুক্ত করে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। অভিযুক্তদের মধ্যে ১৭ জন মারা গেছেন, বেঁচে আছেন ৩২ জন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে বিজেপির সিনিয়র নেতা এলকে আদভানি, মুরালি মনোহর যোশী, উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং, বিজেপির ফায়ার ব্র্যান্ড নেত্রী উমা ভারতী ও বিনয় কাটিয়ারের মতো প্রভাবশালী নেতাও রয়েছেন।
রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সদস্য কামাল ফারুকী বলেছেণ, ‘২৭ বছর আগে অযোধ্যায় যা ঘটেছিল তা রাতের অন্ধকারে নয় বরং প্রকাশ্যে দিবালো হয়েছিল।’
মোঘল সম্রাট বাবরের নির্দেশে ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় ১৫২৮-২৯ সালে গড়ে উঠেছিল মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় নির্দশন বাবরি মসজিদ। মীর বাকী নামের এক ব্যক্তির শিল্পকর্মে গড়ে উঠা এই মসজিদটির নামকরণও করা হয় সম্রাট বাবরের নামে। পরবর্তীতে ভারতের কট্টরপন্থি উগ্রবাদী হিন্দুদের একাংশ দাবি তোলে, যে জায়গাটিতে বাবরি মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছিল সেটি ছিল রাম অবতারের পবিত্র জন্মভূমি। সেখানে থাকা রাম মন্দির ভেঙে সম্রাট বাবর গড়ে তুলেছিলেন বাবরি মসজিদ। এ নিয়ে গত কয়েক শতক ধরে চলা বিতর্ক এক পর্যায়ে ভারতের রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলে।
১৮৮৫ সালে মসজিদ প্রাঙ্গণে হিন্দু ধর্মীয় সংস্থাগুলো দেবতা রামের সম্মানে একটি মন্দির নির্মাণের অনুমিত চাইলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। ১৯৪৯ সালে একদল হিন্দু মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে রামের একটি মূর্তি স্থাপন করেন। কিন্তু সেটি না সরিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। এ ছাড়া একজন হিন্দু ধর্মীয় গুরুকে সেটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৮৬ সালে ফয়জাবাদ জেলা প্রশাসন মসজিদ প্রাঙ্গণ হিন্দুদের ধর্মীয় আচার পালনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এর পর ১৯৯২ সাল পর্যন্ত পরিস্থিতি বেশ শান্তই ছিল।
কিন্তু ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর শিবসেনা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও ক্ষমতাসীন বিজেপির সমর্থনে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ। এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে দাঙ্গায় শুধু মুম্বাই ও দিল্লিতেই অন্তত ২ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়। বলা হয়ে থাকে, ভারতের ইতিহাসে এত বড় অভ্যন্তরীণ দাঙ্গা আর কখনও হয়নি।
এর আগে গেল বছরের ৯ নভেম্বর ভারতের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত অযোধ্যা মামলায় ভেঙে ফেলা বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। সেইসঙ্গে মসজিদের জন্য শহরের সুবিধাজনক ও গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থানে ৫ একর জমি দেয়ার আদেশ দেয়া হয়। ওই রায় নিয়েও দেশটির হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন