প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে উঠে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। বহু বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে মেরেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। বিএসএফ জানায়, সীমান্তে অধিকাংশ নিহতরাই হচ্ছে সন্ত্রাসী ও পাচারকারী। তাদের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামও বলেছেন, নিহতরা অধিকাংশ সন্ত্রাসী ও পাচারকারী।
দুই দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর একই সুরের মধ্যে এবার ভারতের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা (সিবিআই) এর তদন্ত রিপোর্টে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। সিবিআই বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত বিএসএফ।’
কিছুদিন আগে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী এমন একটি অভিযোগ করেছিলেন বিএসএফ। একইসময়ে বাংলাদেশও সেই অভিযোগ নাকচ করে পাল্টা ভারতের উপর দোষ চাপিয়েছিল।
সম্প্রতি সিবিআইয়ের এক তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এলো। বলা হচ্ছে, সীমান্তে বিএসএফ এবং শুল্ক বা কাস্টমস বিভাগের বহু অফিসার সরাসরি গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত। বুধবার বিএসএফের এক অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। বস্তুত, এর আগেও বিএসএফের অফিসারদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে এবং তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিবিআই জানিয়েছে, অভিনব কায়দায় এই গরু পাচার চালানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিএসএফকে সীমান্তে গরু ধরতেই হয়। খাতায় কলমে দেখাতে হয়, মাসে কতজন পাচারকারীকে তারা গ্রেফতার করেছে এবং কত সংখ্যক গরু উদ্ধার হয়েছে। বিএসএফ তা নিয়মিত করেও। খেলা শুরু হয় তার পরে। মালদা, মুর্শিদাবাদসহ রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ বাজেয়াপ্ত গরুকে খাতায় কলমে বাছুর বানিয়ে দেয়। খাতায় বাছুর অথচ বাস্তবে পূর্ণ বয়স্ক গরুকে নিয়ে এরপর বাজারে যাওয়া হয়। সেখানে সেই গরুর বাছুর হিসেবে নিলাম হয়। অর্থাৎ, খুব কম টাকায় তা বিক্রি করা হয়। যারা সেই গরু কিনছে, তারা পাচারকারী। নিলাম এমন ভাবে করা হয়, যাতে পাচারে বাজেয়াপ্ত গরু ফের পাচারকারীর হাতেই পৌঁছয়। প্রতিটি নিলামে বিএসএফের অভিযুক্ত অফিসারদের দেয়া হয় গরু পিছু দুই হাজার টাকা। শুল্ক বিভাগের অফিসারদের দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। পাচারকারীরা ফের সেই গরু সীমান্তের অন্য পারে পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয়বার তাদের গরু আর ধরা হয় না।
সিবিআই সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ মাস সীমান্তে কাজ করেছিলেন সতীশ। সে সময় প্রায় ২০ হাজার গরু পাচারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উপার্জন করেছেন তিনি।
এর আগেও বিএসএফ এর এক অফিসারকে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখন তিনি জামিনে মুক্ত। তাঁর কাছ থেকেই সতীশের নাম পাওয়া যায় বলে জানা গিয়েছে। বিএসএফ এবং শুল্ক বিভাগের এমন আরও অফিসার সিবিআইয়ের নজরে আছে বলে শোনা যাচ্ছে।
এখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি এনআইএ এবং সিবিআইয়ের সূত্রের থেকে জানা গেছে, গরু পাচারের সঙ্গে আরও ভয়াবহ লেনদেনের ঘটনাও ঘটে। অভিযোগ, গরুপাচারকারীরা অস্ত্রের পাচারের সঙ্গেও যুক্ত। পাচারের বিভিন্ন পদ্ধতির বিষয়ে জানতে পেরেছে এনআইএ। পাচারকারীরা জেএমবি এর সঙ্গে জড়িত বলেও কোনও কোনও মহলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ বিষয়ে বিশদে এখনও কিছু জানাতে রাজি হননি অফিসাররা।
দীর্ঘ দিন ধরেই গরু পাচার নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিতর্ক হয়। কিছু দিন আগেও গরু পাচারকারী, এই অভিযোগে আসামে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিককে পিটিয়ে মারা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে বিএসএফ যে যুক্ত এতদিন তা ওপেন সিক্রেট সিবিআই সেই সত্যেই শিলমোহর দিয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন