বিশ্বব্যাপী স্কুলগুলো পুনরায় খোলার কথা ভাবা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের যৌথ মনিটরিং প্রোগ্রাম (জেএমপি) এর সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে বিশ্বের ৪৩ শতাংশ স্কুলে প্রাথমিকভাবে হাত ধোয়ার মতো সাবান ও পানিরও অভাব রয়েছে। আর হাত ধোয়াই করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও নিরাপদে স্কুল পরিচালনার হাতিয়ার।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিটা ফোর বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর থেকে বিশ্বব্যাপী স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া শিশুদের শিক্ষা এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। আমাদের অবশ্যই শিশুদের শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তার মানে হাতের পরিচ্ছন্নতা, বিশুদ্ধ পানীয় জল এবং নিরাপদ স্যানিটেশন সুবিধাসহ স্কুলগুলি পুনরায় খোলার জন্য নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৮১৮ মিলিয়ন শিশুদের বিদ্যালয়ে হাত ধোয়ার মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে, যা তাদের কোভিড -১৯ এবং অন্যান্য সংক্রমণযোগ্য রোগের ঝুঁকিতে ফেলেছে। এই শিশুদের এক তৃতীয়াংশ (২৯৫ মিলিয়ন) উপ-সাহারান আফ্রিকার শিশু। স্বল্পোন্নত দেশগুলিতেও ১০টির মধ্যে ৭টি স্কুলে প্রাথমিক হাত ধোয়ার সুবিধারও অভাব রয়েছে এবং অর্ধেক স্কুলের মৌলিক স্যানিটেশন এবং পানির অভাব রয়েছে।
প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সরকারকে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা এবং লকডাউন ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাবগুলির ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। দীর্ঘসময় স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বাচ্চাদের সুরক্ষা, সুস্থতা এবং শেখার উপর নেতিবাচক প্রভাবের প্রমাণ যথাযথভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস অ্যাধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেন, স্কুলসহ সব জায়গা থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যকর পরিষেবাগুলির সহজলভ্যতা অপরিহার্য। চলমান করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে স্কুলগুলি পুনরায় চালু করা এবং পরিচালনা করার জন্য এটি অবশ্যই সরকারী কৌশলগুলির প্রধান লক্ষ্য হতে হবে।
প্রতিবেদনে আরো উঠে এসেছে, স্কুলে প্রাথমিক হাত ধোয়ার সুবিধার অভাব রয়েছে এমন ৮৮১ মিলিয়ন শিশুর মধ্যে ৩৫৫ মিলিয়নের বিদ্যালয়ে পানি ছিল তবে সাবান নেই এবং ৪৬২ মিলিয়ন শিশুর স্কুলে হাত ধোয়ার জন্য পানিও নেই।
কোভিড -১৯ এর কারণে ৬০ টি দেশ স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার সংকটের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। সেসব দেশে ৪ জনের ৩ জন শিশু স্কুলে যখন এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিলো তখনও প্রাথমিক হাত ধোয়ার সুবিধা পায়নি। শিশুদের অর্ধেক পানিও পায়নি এবং অর্ধেকের বেশি শিশু স্যানিটেশন সুবিধা পায়নি।
বিশ্বের ৩টির মধ্যে ১টি স্কুলে হয় খাওয়ার পানি নেই বা অভাব রয়েছে। ৬৯৮ মিলিয়ন শিশুর স্কুলে স্যানিটেশনের সুবিধা নেই।
প্রতিবেদনে স্কুলগুলিতে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ব্যবহার, পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্তকরণের পাশাপাশি পরিষ্কার জল, সাবানসহ হ্যান্ড ওয়াশিং স্টেশন এবং নিরাপদ টয়লেটসেবা সরবরাহ করার কথা উঠে এসেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন