যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিষয়ক মন্ত্রী অ্যালেক্স আজার সোমবার তাইওয়ানের সফরে প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিবিড় দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতার ঘোষণা করেছেন। এই পদক্ষেপের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে ক্ষুব্ধ চীন ওইদিন তাইওয়ান প্রাণালীতে যুদ্ধবিমান নিয়ে চক্কর দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এতকাল ‘এক চীন নীতি’ মেনে চললেও ট্রাম্প প্রশাসন সেই ধারাবাহিকতার মূলে আঘাত করলো। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। রাখঢাক না করে প্রকাশ্যে এমন সাক্ষাতের ফলে সঙ্গে সম্পর্কে আরও চিড় ধরার ঝুঁকির পরোয়া করলেন না ট্রাম্প।
রাজধানী তাইপেতে মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাইওয়ানের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের জোরালো সমর্থন জানান। সেই সঙ্গে করোনা মহামারির মোকাবিলায় তাইওয়ানের পদক্ষেপকে বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে প্রশংসা করেন তিনি।
মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজার তাইওয়ানের খোলামেলা, স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক সমাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাইওয়ানের স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তিনি। ১৯৭৯ সালে তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ত্যাগ করার পর এই প্রথম কোনো মার্কিন মন্ত্রী এত বড় প্রতিনিধিদল নিয়ে সে দেশ সফর করলেন।
অর্থনীতি ও গণস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতার ঘোষণা করে আজার বলেন, মহামারি মোকাবিলা ছাড়াও টিকা ও ওষুধ নিয়ে গবেষণা ও উৎপাদনের ক্ষেত্রেও একসঙ্গে কাজ করবে দুই দেশ। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই করোনো সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সাই বলেন বলেন, চীনের আপত্তি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সভায় অংশ নিতে সাহায্য করায় তাইওয়ানের খুব সুবিধা হয়েছে। স্বাস্থ্যের অধিকারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ একেবারেই কাম্য নয়। চীন যেভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে তাইওয়ানের অংশগ্রহণ প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা সর্বজনীন স্বাস্থ্য অধিকারের পরিপন্থি।
তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র মনে করে। কিন্তু চীন এখনও তাদের স্বাধীনতা মেনে নেয়নি। বরং তাইওয়ানকে তারা তাদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ মনে করে এবং বলপ্রয়োগ করে হলেও একদিন অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবে বলে বিশ্বাস করে। চীন ও তাইওয়ানের বিরোধের এই সুযোগে তাইওয়ানকে কাছে টানছে চীনবিরোধী যুক্তরাষ্ট্র।
তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নীতির কড়া সমালোচনা করছে চীন। বাণিজ্য, সামরিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির মধ্যে ওয়াশিংটন-তাইপের সখ্যতা বেইজিং মোটেই পছন্দ করছে না। মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সফরকে চীন ‘নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার’ প্রতি হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে। সমালোচকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন করোনা সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতা ঢাকতে চীনের প্রতি কড়া সমালোচনার আশ্রয় নিচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে ‘ রেড লাইন’ অতিক্রম করতে প্রস্তুত নয়।
তাইপেতে মার্কিন প্রতিনিধি দফতর হিসেবে পরিচিত ‘আমেরিকান ইনস্টিটিউ’ এর সাবেক প্রধান ডগলাস পাল বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত কোনো মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তা তাইওয়ান সফর করছেন না। এদিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচনে চীন ট্রাম্পের পরাজয় নিশ্চিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বদলে যদি জো বাইডেন (যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিরোধী দল ডেমোক্র্যাট মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী) ক্ষমতায় এলেও চীনের সঙ্গে বর্তমান শীতল সম্পর্ক রাতারাতি বদলে যাবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে,
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন