ছেলে অপহরণের পর ৩২ বছর ধরে তাকে হন্যে হয়ে খুঁজেছেন এক মা। অবশেষে ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন। তবে এতোদিনে সেই ছোট্ট ছেলেটি হয়ে গেছেন যুবক। জানা গেছে, ওই মায়ের নাম লি জিংঝি এবং তার ছেলে মাও ইন।
১৯৮৮ সালে অপহরণের পর বেচে দেওয়া হয়েছিল মাও ইনকে। চলতি বছরের মে মাসে ছেলের খোঁজ পান লি জিংঝি। এরপর গত সপ্তাহে তাদের দেখা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে চীনের শানজি প্রদেশের শি'য়ান শহরে।
লি জিংঝি বলেছেন, অপহরণের সময় আমার ছেলের কেবল দুই বছর আট মাস বয়স ছিল। তাকে আমরা শি'য়ান শহরের একটি চিড়িয়াখানায় ফিরে পেলাম। আমি তাকে জড়িয়ে ধরতেই সে তার উষ্ণ হাতটা আমার গালে রাখে। সে চোখ বন্ধ করে আমার মুখে মাথা চেপে ধরে।
মাও ইন ওই নারীর একমাত্র ছেলে। তিনি ও তার স্বামী চেয়েছিলেন, ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করবেন। এজন্য প্রতিদিন তাকে কিন্ডারগার্টেনে রেখে কাজে যেতেন এবং ফেরার সময় তাকে নিয়ে যেতেন।
এক্সপোর্ট কম্পানিতে কাজ করতেন লি জিংঝি। কাজের জন্য মাঝেমাঝেই শহর ছেড়ে যেতে হতো তাকে। একবার মালিকপক্ষ তাকে বার্তা পাঠায়, তোমার বাড়িতে জরুরি অবস্থা, দ্রুত চলে আসো। ফিরে এসে জিংঝি জানতে পারেন, সন্তান অপহরণ হয়েছে।
জিংঝির স্বামী তার ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দোকানে যান। ওই সময় মাও ইন গাড়িতে ছিল। তবে দোকান থেকে ফিরে ছেলেকে আর পাননি তার বাবা। তিনি ভেবেছিলেন, ছেলে হয়তো হেঁটে বাড়ি চলে গেছে কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত আর তার খোঁজ মিলছিল না।
পরে ছেলের ছবিসহ এক লাখ পোস্টার ছাপানো হয়। শি'য়ান রেলস্টেশনে, বাসস্ট্যান্ডে সেসব বিতরণ করা হয়। স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। তারপর প্রতি শুক্রবার ছেলেকে খুঁজতে বের হন ওই মা।
একবার শি'য়ান শহর থেকে দূরের যাত্রাপথে বাসে আরেক দম্পতির পাশে বসেন জিংঝি ও তার স্বামী। এ সময় ওই নারীরা বলেন, তাদের ছেলের মতোই দেখতে একজনকে একই সময়ে কিনে নিয়ে দত্তক নিয়েছেন এক দম্পতি। ছেলেটিকে শি'য়ান শহর থেকে আনা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্থলে গিয়ে আশাহত হন জিংঝি।
এরপর ২০০৯ সালের ঘটনা। ডিএনএ ডাটাবেজ তৈরি করে চীন সরকার। সেখানে সন্তান হারানো দম্পতি নিজেদের ডিএনএ'র নমুনা দিতে পারেন। এতে করে তারা নিজের সন্তান বেছে বের করে নিতেে পারেন। কিন্তু সেজন্য বাবা-মার ডিএনএ নমুনা থাকার পাশাপাশি ডাটাবেসে সন্তানের ডিএনএ নমুনাও থাকা দরকার।
এরপর গত ১০ মে শি'য়ান শহরের পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরো ফোন করে জানায়, মাও ইন'কে পাওয়া গেছে। খবরটি যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না জিংঝি। ওইদিনই তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। ফলাফল মিলে যায়।
৩২ বছর পর অবশেষে সন্তান ফিরে পান পাগলের মতো সন্তানের খোঁজে ঘুরে বেড়ানো মা।
সূত্র : বিবিসি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন