‘নেতৃত্বে যদি রদবদল না আসে, তা হলে লেবানন ডুবতেই থাকবে।’ স্বয়ং দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতে সফরকারী ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন। বিস্ফোরক ভবনে জোড়া বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত বৈরুতে গিয়ে ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেছেন, লেবাননের পাশে তার দেশ ছিল, থাকবে। তবে এও স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, ক্ষমতা কাঠামোয় বদল না এলে আর একটিও টাকা বা এক ফোঁটা জল নিয়েও সাহায্যে এগিয়ে আসবে না ফ্রান্স।
বাংলাদেশকে যেমন শাসন করে গেছে ব্রিটিশরা। লেবাননের বেলায় ঠিক তেমনি এ শাসন করেছিল ফরাসিরা। জার্মানির সহায়তায় ১৯৪৩ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফ্রান্স থেকে স্বাধীন হয় লেবানন। তারপরও ফ্রান্স ‘যেতে নাহি চাই’ নীতির আশ্রয় নেয়। পরে ব্রিটিশরাও হস্তক্ষেপ করে। শেষে ১৯৪৬ সালে পূর্ণ স্বাধীন হয় লেবানন।
কিন্তু এখনো যে সে দেশের ওপর ফরাসিদের প্রভাব সবার চেয়ে বাড়িয়ে, তা পরিলক্ষ করা যাচ্ছে ম্যাক্রনের বৈরুত সফর এবং সেখানকার নেতৃত্ব নিয়ে তার দেওয়া সতর্কবার্তায়।
এমনকি ইউরোনিউজের গতকাল এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম করে ৫০ হাজার লোক একটি অনলাইন পিটিশনে সই করেছেন যাতে বলা হয়েছে, ফ্রান্স যেন আবার লেবানন শাসনের দায়িত্বভার গ্রহণ করে।
পিটিশনে বলা হয়েছে, ‘দেশ সুরক্ষা ও পরিচালনায় পুরোপুরি ব্যর্থ’ লেবানিজ সরকারের ওপর দেশের জনগণ বেজায় চটে আছে, তারা হতাশও বটে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘ব্যর্থরাষ্ট্র, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে জর্জরিত দেশটি যেন মরতে বসেছে। আমরা মনে করি, ফরাসি ইশতেহারের আওতায় আবার লেবাননকে দিয়ে দেওয়া উচিত।’
পিটিশনে সই করা এক ব্যক্তি ইউরোনিউজকে বলেছেন, ‘ফ্রান্স ছেড়ে যাওয়া পর, লেবানন ডুবছে তো ডুবছেই। গৃহযুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সীমান্ত সংকট তো আছেই।’
বৈরুত বিপর্যয়ের পর বিদেশি নেতাদের মধ্যে ম্যাক্রনই প্রথম বৈরুত সফরে গেলেন। বৃহস্পতিবার বৈরুতে পৌঁছে বিস্ফোরণস্থলসহ ধ্বংস হয়ে যাওয়া রাস্তাঘাট ঘুরে দেখেন তিনি। আর গতকাল তিনি লেবাননের প্রেসিডেন্ট মাইকেল আউনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
লেবাননের জন্য জরুরি সাহায্যের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাহায্যের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ম্যাক্রন। একই সঙ্গে লেবাননের সরকারকে অর্থনৈতিক সংস্কার সাধন করাসহ দুর্নীতি দমন করার আরজি জানান।
ম্যাক্রন বলেন, ‘সংস্কার না হলে লেবানন ডুবতেই থাকবে। এখানে আরও যে জিনিসটি দরকার তা হচ্ছে রাজনৈতিক পরিবর্তন। এ বিস্ফোরণ থেকে নতুন যুগের সূচনা হওয়া উচিত।’
গত মঙ্গলবার বিকালে বৈরুতের বন্দর এলাকায় বিস্ফোরণে পুরো বৈরুত শহর ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে। এতে দেড় শতাধিক মানুষ মারা গেছে। আহত হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি। এখনো নিখোঁজ বহু মানুষষের সন্ধান চলতে থাকায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্দরের একটি গুদামে হাজার হাজার টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিরাপদে না রাখাই এত বড় মর্মান্তিক বিস্ফোরণের কারণ বলা হচ্ছে।
ম্যাক্রন সাহায্যের আশ্বাস দেওয়ার পরই এক বৈরুতবাসী বলেছেন, ‘আমরা আশা করি এ সাহায্য লেবাননের জনগণ পাবে, দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের হাতে যাবে না।’
আরেকজন বলেন, ‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সময় করে আমাদের দেখতে আসতে পেরেছেন, অথচ লেবাননের প্রেসিডেন্ট আসেননি।’
ম্যাক্রন লেবাননবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আপনাদের মুখাবয়বে আবেগ, দুঃখ, যন্ত্রণার ছাপ দেখতে পাচ্ছি। সে কারণেই আমি এখানে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন