ভারতের ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) প্রধান এবং সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শরদ পওয়ার সাম্প্রতিক চীন-ভারত সংঘাত নিয়ে বলেন, ভারতের প্রধান প্রতিপক্ষ চীন, পাকিস্তান নয়। চীন প্রধান প্রতিপক্ষ হলেও তাদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করার ভারতের উচিত হবে না। এছাড়া চীনের সঙ্গে ভারতের এই দ্বন্দ্ব পারস্পরিক আলোচনা, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের সহায়তায় সমাধান সম্ভব ছিলো বলেও মন্তব্য করেছেন
সাবেক এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, মোদী সরকার অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে ভিন্ন অবস্থানে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি কখনো পরিবর্তন হয়নি। জহরলাল নেহরুর সময় থেকে শুরু করে ইন্দিরা গান্ধী এমনকি অটল বিহারি বাজপেয়ীর শাসনামলেও পররাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তন করা হয়নি। কিন্তু নরেন্দ্র মোদঅ ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। নিজের প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চেয়েছিলেন মোদি, কিন্তু তা কাজে আসেনি।
শরদ পাওয়ার বলেন, চীন বেশ সহজেই নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে ভারতের বিরুদ্ধে নিয়ে গেছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম যেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মোদী কথা বলেন, সেটি হচ্ছে নেপাল। অথচ সেই নেপাল এখন চীনের পক্ষে! পাকিস্তানও কার প্রতি অনুগত তা বেশ স্পষ্ট। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বড় ভূমিকা রেখেছে ভারত। কিন্তু সম্প্রতি দেশটি চীনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। একই অবস্থা শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও। এর মানে হলো, ভারতকে ঘিরে থাকা সকল দেশ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে। আর প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের এই মতভেদ মোদী সরকারের ‘নতুন অর্জন’।
এনসিপি প্রধান মনে করেন, চীনের সঙ্গে ভারতের এই সমস্যা যুদ্ধের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘চীনের মোট সামরিক বাহিনীর ১০ ভাগের একভাগ আমাদের রয়েছে। আর এভাবে পিছিয়ে থেকে কখনও প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধের কথা চিন্তা করা উচিত নয়। এটা সত্য প্রয়োজনে যুদ্ধ করতে আমরা প্রস্তুত এবং তার জন্য যে কোন মূল্য দিতেও প্রস্তুত রয়েছি আমরা।’
তিনি আরও বলেন, কিন্তু যুদ্ধের বদলে কূটনৈতিক কার্যক্রম এবং আলোচনার মাধ্যমে আমাদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যাওয়া উচিত। আমরা চীনের কাছে প্রায় ৫০ বছর আগে নিজেদের ভূ-খণ্ডের কিছু অংশ হারিয়েছি। তার ওপর আমাদের অধিকার রয়েছে। আর সেই অঞ্চল নিজেদের অধিকারে আনতে অন্যান্য দেশ এবং জাতিসংঘের সহায়তায় চীনের ওপর চাপ প্রয়োগ করা উচিত।’
সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভাষ্য, প্রায় তিন দশক আগে চীনের মূল শত্রু ছিলো যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান। কিন্তু তা এখন পরিবর্তন হয়েছে। তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হয়েছে ভারত।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে ১৯৯৩ সালে চীন সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করি, সে এ বিষয়ে ধারণা দিয়েছিলো। তিনি বলেছিলেন, বর্তমানে প্রতিবেশী কারো সঙ্গে সংঘর্ষে যেতে চায়না চীন। তাদের লক্ষ ছিলো যুক্তরাষ্ট্র। তিনি জানিয়েছিলেন, ২৫ বছর পর প্রতিবেশীদের নিয়ে চিন্তা করবে চীন।’
ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মোদী সরকারের অবস্থান নিয়েও সমালোচনা করেন শরদ। ভারতের সাবেক এই প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর মতে, দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কোভিড-১৯ মহামারি প্রেক্ষাপটে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে মোদী সরকারকে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন