তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত ঐতিহাসিক ‘আয়া সোফিয়াকে’ মসজিদে রূপান্তর করার সিদ্ধান্তে ‘খুবই কষ্ট’ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। রোমান ক্যাথলিকদের সর্বোচ্চ এই ধর্মীয় নেতা ভ্যাটিকানে এক সার্ভিসে বলেন, তিনি কষ্ট পেলেও ইস্তাম্বুলের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছেন। বিশ্বে বেশ কয়েকজন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতার পাশাপাশি পোপও তুরস্কের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।
রবিবার ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটারস স্কয়ারের সাপ্তাহিক সভায় জাদুঘরের মর্যাদা বাতিল হওয়ার বিষয়ে খুব বেশি কিছু বলেননি পোপ ফ্রান্সিস। তিনি বলেন, “আমি ইস্তাম্বুল নিয়ে চিন্তা করছি, আমি ইস্তাম্বুলের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি। যখন সান্তা সোফিয়া নিয়ে চিন্তা করছি, তখন খুবই কষ্ট পাচ্ছি।”
শুক্রবার (১০ জুলাই) তুরস্কের শীর্ষ প্রশাসনিক আদালত আয়া সোফিয়ার জাদুঘর মর্যাদা নাকচ করেছে। প্রশাসনিক আদালতের রায়ে জাদুঘরটি আবারও মসজিদ হল। রায়ে আদালত বলেছেন, “পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে যে, এই স্থাপনা মসজিদ হিসেবেই বরাদ্দ ছিল। এর বাইরে অন্য কিছু হিসেবে এটিকে ব্যবহার করা আইনগতভাবে সম্ভব নয়।”
আদালত রায়ে আরও বলেন, “১৯৩৪ সালে মসজিদ হিসেবে এর ব্যবহার বন্ধ করে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভা নিয়েছিল, তা আইনসঙ্গত নয়।”
এরপরই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান আগামী ২৪ জুলাই থেকে নামাজ অনুষ্ঠিত হবে ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণার পরপরই ৮৬ বছর পর হাইয়া সোফিয়া আজান দেয়া হয়। তুরস্কের সব প্রধান নিউজ চ্যানেলে ওই আজান সম্প্রচার করা হয়। এদিকে সামাজিক মাধ্যমে থাকা আয়া সোফিয়ার সব চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
‘ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেস’ এরদোয়ানকে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে এবং বিশ্বের অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক আধ্যাত্মিক নেতা প্যাট্রিয়ার্ক বার্থোলোমিউ এ সিদ্ধান্ত ‘হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এরদোয়ান আরও বলছেন, প্রায় ১৫০০ বছরের পুরোনো স্থাপনা হায়া সোফিয়া একসময় খ্রিস্ট্রান ক্যাথেড্রাল ছিল। এটি মুসলিম, খ্রিস্টান এবং বিদেশিদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য আয়া সোফিয়াকে গত বছরের এক নির্বাচনী সমাবেশে মসজিদে পরিণত করার তাগাদা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
তুরস্কের ইসলামপন্থিরা দীর্ঘদিন ধরেই স্থাপনাটিকে ফের মসজিদে রূপান্তরের দাবি জানালেও ধর্মনিরপেক্ষরা এর বিরোধিতা করে এসেছেন।
আয়া সোফিয়া বাইজেন্টাইন সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ানের আদেশে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ষষ্ঠ শতকে নির্মিত হয়। এরপর থেকে প্রায় এক হাজার বছর ধরে অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় কেন্দ্র ছিল এটি। ১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলে স্থাপনাটিকে মসজিদে রূপান্তরিত হয়। এর প্রায় পাঁচশ বছর পর তুরস্কের প্রথম প্রেসিডেন্ট মুস্তফা কামাল আতার্তুক এটিকে মিউজিয়ামে পরিণত করেছিলেন। ১৯৩৪ সালে জাদুঘরে পরিণত হওয়া আয়া সোফিয়া ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা লাভ করে।
দেড় হাজার বছরের পুরনো আয়া সোফিয়া এক সময় ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গির্জা, পরে তা পরিণত হয় মসজিদে, পরে একে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। যা আবারও মসজিদে রুপান্তরিত হলো।
তাছাড়া, ইউনেস্কো তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এর মর্যাদা পরিবর্তন না করার আহ্বান জানিয়েছিল তুরস্কের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রও হায়া সোফিয়াকে জাদুঘর হিসাবে ব্যবহারের পক্ষে ছিল। তবে তুরস্কের কর্মকর্তারা অবশ্য এর পরিবর্তন নিয়ে অন্য দেশ বা সংস্থার কথা শুনতে রাজি ছিলেন না। “আমাদের সম্পত্তি নিয়ে কী করব, তা আমাদের ব্যাপার” এই ছিল তাদের মত।
তবে আয়া সোফিয়াকে আবার মসজিদে রূপান্তরের সিদ্ধান্তের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চ বলেছিল, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তুরস্কের আদালত তাদের উদ্বেগ বিবেচনায় নেয়নি এবং এ সিদ্ধান্ত আরও বড় পরিসরে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন