ফুয়াদ হালিমের ‘কলকাতা স্বাস্থ্য সংকল্’। মানুষই ইতিহাস রচনা করে, গরীবের প্রকৃত মসীহা ড. ফুয়াদ হালিম সেই মানুষেরই প্রতিনিধি, নিঃশব্দে রচিত হচ্ছে ইতিহাস!
লকডাউনের আগে ছিল মাত্রই ৩৫০ টাকা আর লকডাউনের পরদিন থেকে আজ পর্যন্ত তা কমে হলো ৫০ টাকা। সাধারণতঃ কত টাকা লাগে ১টা ডায়ালিসিস এ? ৯০০- ১২০০ টাকা!
ফুয়াদ ৩৫০ টাকা নিতেন। কেন? কারণ তিনি ডঃ ফুয়াদ হালিম, মানুষের ডাক্তার, গরীবের ডাক্তার, তিনি এমন এক দর্শনের মানুষ, যে দর্শন বলে,‘যার টাকা তার স্বাস্থ্য’ নয়, ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য’। ‘যার টাকা তার সমাজ’ নয়, ‘সকলের জন্য সমাজ।’
খোলাখুলি মার্কসবাদী দর্শনের প্রচারক, এ বিশ্বে একদিন সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সব মানুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা লাভ করবে, বুক বয়ে শুধু এ স্বপ্নকে লালিত করাই নয় তার পথ কেটে যাবার জন্য অকুতভয়ে জীবন বিলিয়ে দেওয়া।
সারা দেশ তোলপাড় - তিনটে সর্বভারতীয় চ্যানেল, এন ডি টি ভি, টাইমস নাও, ইন্ডিয়া টুডে, সর্বভারতীয় পোর্টাল ‘দ্য প্রিন্ট’, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, সোচ্চারে বলেছে ড. ফুয়াদ হালিম আর ‘কলকাতা স্বাস্থ্য সংকল্প’র কথা!
২৬ মার্চ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২৩৫৭ জন কিডনি রোগীকে ডায়ালিসিস করা হয়েছে ওই ৫০ টাকাতেই। এই পরিষেবা চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত!
কেন? কারণ রোগীরা বলেছিল, লকডাউনে তাদের ডায়ালিসিস সেন্টারে আসা যাওয়ার খরচ বাড়ছে, এ্যাম্বুলেন্স ৩০০০ টাকা ভাড়া চাইছে।
সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিলেন ডঃ হালিম, বললেন এবার থেকে ৩৫০ নয় ৫০ টাকায় হবে ডায়ালিসিস, বাকি ৩০০ টাকা রোগীদের যাতায়াত বাবদ খরচ হোক!
এটাই ছিল এই চরম সংকটকালে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, যা রূপায়ন করতে স্বেচ্ছা আরোপিত প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হয়, শুধু কথার কথা নয়, শূন্য কুম্ভের বাগাড়ম্বর নয়! এ এক বোধ, যা আজ বাস্তবতই বিরল! মানুষ, মানুষের চোখের জল মুছিয়ে দেবার অনন্ত তাগিদ।
কি করে পারছেন ড. ফুয়াদ হালিম?
১) বড়ো হাসপাতালের সাথে " কলকাতা স্বাস্থ্য সংকল্প ", ফলে আনুষঙ্গিক খরচ কম। একে বলা হয় stand alone unit.
২) টেকনজিতে কোনও আপোষ করা নয় কিন্তু অপ্রয়োজনীয় খরচ না করা, যেমন এয়ার কন্ডিশনিং নেই।
৩) যারা মালপত্র সরবরাহ করে তারাও এই ইউনিটের সাথে যুক্ত, ফলত দামে কিছু সাশ্রয় হয়।
৪) ড. হালিম বলছেন, " ৬০ জন বন্ধু আমরা, যারা একসাথে প্রাইমারি, আই সি এস ই, আই এস সি পড়েছি, তারপর যে যার কাজে বিচ্ছিন্ন হয়েছি বটে কিন্তু মানুষের এই কাজে আবার একসাথে জোট বেঁধেছি। "
এ হলো এক দায়বদ্ধতা, মানুষের জন্য, মানুষের টানে, মানুষের প্রয়োজনে, এ এক বিরল হতে বসা মানবীয় মূল্যবোধের উপাখ্যান।
যাদের সামর্থ আছে তারাও এই সুবিধে পায়?
ফুয়াদ বলছেন, হ্যাঁ তারাও পান কিন্তু এসি ছাড়া যাদের চলে না, তারা আসেন না বা থাকেন না, যাদের এ ছাড়া উপায় নেই অর্থাৎ যাদের প্রয়োজন সবচাইতে বেশি, তারাই কেবল এখানে আসেন, তারাই এই সেন্টারকে বেছে নেন। এই ডায়ালিসিস সেন্টার তাই self selecting model, নিজেরাই পছন্দ করে নেন।
ড. ফুয়াদের আপসোস, ভেবেছিলাম ভারতবর্ষের আরও অনেক জায়গায় এমন খরচ কমানোর ঘটনা ঘটবে কিন্তু না, তা হলো কই? সর্বভারতীয় চ্যানেল, খবরের কাগজগুলোতো তেমন ঘটনা খুঁজেই পেলো না!
নিজেই স্বগতোক্তি করলেন, ‘পূঁজিবাদী ব্যবস্থা ঠিক ততটাই স্বাস্থ্য পরিষেবা দেয় যতটা সেই মানুষটা কিনতে পারে কিন্তু সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা একজন চিকিৎসক দিতে পারে কেবল সমাজতন্ত্রকে লক্ষ্য হিসেবে দেখলে।’
অভিনন্দন ডঃ ফুয়াদ হালিম, অভিনন্দন ‘কলকাতা স্বাস্থ্য সংকল্প’।
ড. ফুয়াদ হালিম দীর্ঘজীবী হোন।
অনেকেই ঠিকানা জানতে চাইছেনঃ
ড. ফুয়াদ হালিম
কলকাতা স্বাস্থ্য সংকল্প
১২ নং ডঃ মহম্মদ ইশাক রোড
কলকাতা -১৬
পূর্বপশ্চিম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন