জার্মানির চ্যান্সেলর থাকা অবস্থায় অ্যাঙ্গেলা মারকেল ১২ বার চীন সফর করেছেন। তার নেতৃত্বে জার্মানি ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গাঢ় হয়েছে৷
গত বছর দুই হাজার ৬০০ কোটি ইউরোর বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে দেশ দু'টির মধ্যে৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এখন চীন।
ইউরোপে বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও (ইইউ) দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে গেছে দেশটি। এক্ষেত্রে তাদের চেয়ে এগিয়ে আছে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে চীনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বাড়ছে। সে দেশে উইঘুর মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধরে শি জিনপিং সরকারের অস্বস্তির কারণ। সম্প্রতি তার সঙ্গে যোগ হয়েছে হংকংয়ে কার্যকর করা জাতীয় নিরাপত্তা আইন।
এসবের বিরুদ্ধে জার্মানির কঠোর অবস্থানের দাবি তুলছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
জার্মানির রাজনীতিবিদরাও একই দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু জার্মানি এ ব্যাপারে যেন মুখে কুলুপ এঁটে আছে।
হংকংয়ে নিরাপত্তা আইন চাপিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে জার্মানির কৌশলী অবস্থানের সমালোচনা করছেন অনেকেই। এ নিয়ে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিরাও হতাশ।
জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স (ডিজিএ)-র গবেষক ডিডি টাটলো বলেন, গত কয়েক মাসে হংকংয়ের ব্যাপারে জার্মানির নীরবতা হংকংয়ের মানুষকে হতাশ করেছে।
দেখা গেছে জার্মানি প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। আর চীনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়াগুলোও হচ্ছে দুর্বল।
তিনি আরো বলেন, আমার মনে হয়, হংকংয়ের মানুষ যেহেতু যথেষ্ট বুদ্ধিমান, তাই তারা নিশ্চয়ই পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তারা জার্মানি যে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করছে না সেটা ঠিকই বুঝতে পারছে।
জার্মানিসহ ইউরোপের প্রায় সব দেশের সঙ্গেই বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করেছে চীন। চীনের বিশাল অঙ্কের বেল্ট অ্যান্ড রোড অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে ইতালি। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোও এশিয়ার জায়ান্টদের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াচ্ছে।
এ বছরের সেপ্টেম্বরে জার্মানির লাইপসিশ শহরে ইইউ-চীন সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে সম্মেলন স্থগিত হলেও পুরোপুরি বাতিল হয়ে যায়নি।
মানবাধিকার প্রশ্নে চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার দাবি জোরদার হলেও জার্মানি বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
জার্মানির সামাজিক গণতান্ত্রিক দল এসপিডির নেতা এবং ইউরোপীয় সংসদের সাবেক সভাপতি মার্টিন শুলৎস মনে করেন, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত চীনের সকল পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা৷ তবে জার্মানির এফডিপির নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার মনে করেন, বাণিজ্যকে অগ্রাহ্য করা ঠিক হবে না।
সূত্র: ডয়চেভেলে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন