দেশে করোনা ভাইরাসের টেস্ট নিয়ে প্রতারণা ও টেস্টের মান নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, টেস্টের মান উন্নত না হলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বেকায়দায় পড়তে পারে বাংলাদেশ।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে করোনার উচ্চ সংক্রমণ রয়েছে। অথচ তারা করোনা নেগেটিভের সার্টিফিকেট নিয়ে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া এমন ঘটনাও ঘটেছে বাংলাদেশে কেভিড-১৯ টেস্টের ফল নেগেটিভ হয়েছে, কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পর সেই ফলই পজিটিভ হয়েছে। এসব নানা ঘটনার কারণে বাংলাদেশের করোনা ভাইরাস টেস্টের মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে কয়েকটি দেশ বিমান চলাচলের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ যোগ হয়েছে ইতালি। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ২২৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৩৬ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এ বিষয়টিকে ‘ভাইরাসবাহী বোমার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন ইতালির স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা। আবার এ ঘটনার পর গতকাল কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট থেকে ১২৫ বাংলাদেশিকে নামতে বাঁধা দেয় ইতালির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া এর আগেই বাংলাদেশ থেকে জাপানে চার্টার্ড ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে জাপানে যাওয়া একটি ফ্লাইটে চারজন যাত্রী কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছিল। যদিও বাংলাদেশ থেকে জাপানে রওনা দেওয়ার আগে তাদের কাছে কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ ছিল।
এদিকে ঢাকা থেকে চীনের গুয়াংজু যাতায়াতকারী চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের ফ্লাইট সাসপেন্ড করা হয় গত ২২ জুন। ওই এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে গুয়াংজু যাওয়ার পর ১৭ জন যাত্রীর দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া কয়েকটি দেশ থেকে আগত যাত্রীদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।
অন্যদিকে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো বিমান চলাচল খুলে দিলেও বাংলাদেশ এই তালিকায় নেই। অবশ্য রাশিয়া এবং আমেরিকাও এই তালিকায় নেই, তবে তা মূলত উচ্চ সংক্রমণের কারণে।
সিঙ্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক পীযুষ সরকার বলেন, ‘টেস্টের মান রক্ষা করা বেশ জরুরি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একবার বিশ্বাস হারিয়ে গেলে সেটি ফিরে পাওয়া বেশ কঠিন।’
সিঙ্গাপুরে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা দিতে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা একটি উদ্যোগ নিয়েছে। সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ সোসাইটি একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছে। সেই টিমের সদস্য ডা. পীযুষ সরকার।
ডা. পীযুষ সরকার বলেন, এখানে দুটি বিষয় জড়িত আছে। একটি হচ্ছে, টেস্ট নিয়ে প্রতারণা। অর্থাৎ টেস্ট না করেই রিপোর্ট দেওয়া পুরোপুরি প্রতারণা। আরেকটি হচ্ছে, টেস্টের মান রক্ষা করা। টেস্টের মান ভালো না হলে সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র জানা সম্ভব নয়। ফলে সংক্রমণ বাড়তেই থাকবে।
ডা. পীযুষ সরকার বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর নানা দেশ বিদেশিদের আগমনের ক্ষেত্রে এখন বেশ সতর্ক। টেস্টের ক্ষেত্রে উচ্চমান বজায় রাখার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশকে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন