মিয়ানমারের রাখাইনে রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী আবারো অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযান রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বড় অন্তরায় হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
রোববার বিকেলে ‘করোনা পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের জন্য সাড়াদান’ শিরোনামে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় একথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির জন্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রচেষ্টার গতি ধীর হয়ে গেছে। তবে এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পর এ বিষয় নিয়ে আলোচনায় গতি আসবে।
এ সভায় আরও অংশ নেন জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ক গবেষক ড. সুমাইয়া তাসনিন। সঞ্চালনা করেন সিআরআইর সৌভিক দাশ তমাল।
আলোচনায় সমাজিক জীবন উন্নয়নে নানা বিষয় নিয়ে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জয়বাংলা’ পুরস্কারপ্রাপ্ত তরুণ উদ্যেক্তারা প্রশ্ন করেন। আলোচকরা তাদের প্রশ্নের জবাব দেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রাখাইনে আরকান আর্মির সংঘাতের বিষয় সামনে এনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আবারো অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযান রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য অন্তরায় হতে পারে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা এবং ঝুঁকির হয়ে যাচ্ছে, এ অঞ্চলের জন্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, এটা কারও অজানা নয়। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিজের দেশ মিয়ানমারে সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের জন্য যতভাবে সম্ভব কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির জন্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রচেষ্টার গতি ধীর হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পর এ বিষয় নিয়ে আলোচনায় গতি আসবে, এটাই প্রত্যাশা।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গত মার্চ মাস থেকেই রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যে কারণে মাত্র পাঁচজন রোহিঙ্গা করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। কক্সবাজারে প্রতিদিন ৭শ’ করোনার নমুনা পরীক্ষা চলছে। এটা অন্য এলাকার তুলনায় বেশি।
এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সামনে বর্ষা মৌসুম। কক্সবাজারে ভূমিধস হতে পারে। এছাড়া এ এলাকায় মানবপাচারসহ অন্যান্য তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। সবদিক বিচেনায় করেই বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা। এখন পর্যন্ত ৩০৬ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে আছেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশ যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, সেই পদক্ষেপে ইউএনএইচসিআর সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে আছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার প্রচেষ্টাতেও ইউএনএইচসিআর সক্রিয় রয়েছে। বর্তমানে কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ঠেকাতে ইউএনএইচসিআর বিশেষভাবে কাজ করছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায়।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির শুরু থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছির, তা বাস্তবে দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি কক্সবাজারের স্থানীয়দেরও সুরক্ষা এবং সহায়তা নিশ্চিত করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের তার দপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন