বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আম্পানের দাপটে কলকাতা শহরে শুধু বাতিস্তম্ভই ভেঙেছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। পাশাপাশি শহরে গাছ ভেঙেছে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি। কলকাতা করপোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানান।
এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু কলকাতায় বাতিস্তম্ভ ভেঙে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি রুপির বেশি। এ ক্ষতি এত সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন করপোরেশনের আলো বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, শুধু বাতিস্তম্ভ ভেঙে পড়াই নয়, তার ছিঁড়ে যাওয়া এবং অন্য পরিকাঠামো যেভাবে নষ্ট হয়েছে, তাতে এ আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। গত ২০ মে আম্পান আঘাত হানার আগেই এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
তখনই আলো বিভাগের কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, বড়সড় ক্ষতি করবে আম্পান। তবে তাদের ধারণা ছিল ক্ষতির অংক কোনোভাবে ১০ কোটি রুপি ছাড়াবে না। ক্ষতি হয়েছে এর তিনগুণ।
করপোরেশনের আলো বিভাগের কর্তারা ক্ষতির হিসাব করতে গিয়ে দেখেছেন, কলকাতার দক্ষিণ এবং পূর্ব শহরে দুর্যোগের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে। উত্তর কলকাতায় ক্ষতি হলেও সেটি তত ভয়াবহ নয়। ফলে শহরের ওই দুই অঞ্চলে কতগুলো বাতিস্তম্ভ দুর্যোগ মোকাবিলা করে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা খুঁজে দেখাই এখন প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, শুধু বাতিস্তম্ভেরই নয়, শহরের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার হিসাব শেষ হলে ক্ষতির পরিমাণ টাকার অংকে আরও বিশাল হতে পারে। এ বিপুল পরিমাণ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার কাজ চলছে।
আলো বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগে শহরে যে প্রবল ঝড় হয়েছিল, তাতে কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডে ১৫৮টি বাতিস্তম্ভ ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু এবারের ঝড় বিগত বেশ কয়েক দশককে ছাপিয়ে গিয়েছে। তাই আম্পান চলে গেলেও এত সহজে সব জায়গায় স্থায়ীভাবে আলো পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সর্বত্রই অস্থায়ীভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে এখনো স্বাভাবিক হয়নি কলকাতা। পুরোপুরি বিদ্যুৎ সংযোগ ঠিক না হওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক হবে না টেলি পরিষেবা।
স্বাস্থ্য দপ্তরের এক প্রতিবেদন জানায়, বিদ্যুৎ না থাকায় সবচেয়ে বেশি নষ্ট হয়েছে ফ্রিজে বা ক্লোডস্টোরে রাখা মেডিসিন। এছাড়া, অনেক ডায়াবেটিক রোগী বাসার ফ্রিজে ইনসুলিন রাখেন। দীর্ঘদিন ফ্রিজ না চলায় সেসব মেডিসিন তাদের গুণ হারিয়েছে। যারা নিয়মিত বাইপাপ (বিদ্যুতে চলা কৃত্রিম অক্সিজেন যন্ত্র) ও নেবুলাইজার ব্যবহার করতেন তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তবে সবদিক দিয়ে আম্পানের প্রাথমিক ক্ষতি কাটিয়ে কলকাতার অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন