এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। প্রবল গতিতে আমফান ধেয়ে আসছে। বিকেল থেকে রাতের মধ্যে তা দিঘায় আছড়ে পড়বে। তার প্রভাবে মঙ্গলবার রাত থেকেই সমুদ্র উত্তাল হয়েছে। ঝোড়ো হাওয়া বইছে।
আমফানের প্রভাবে মঙ্গলবার সকাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশায় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিলো। বুধবার সকালে তা আরও বেড়েছে। দিঘায় সমুদ্র রীতিমতো অশান্ত। গার্ডওয়াল টপকে সমুদ্রের জল রাস্তায় চলে এসেছে। দিঘা, মন্দারমণি থেকে শুরু করে উপকূলবর্তী পশ্চিমবঙ্গে সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে। তবে সমুদ্র সব চেয়ে অশান্ত হয়েছে দিঘায়। এখানেই আমফান আছড়ে পড়ার কথা। পূর্ব মেদিনীপুরে প্রায় ৪ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় জল উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হলদিয়াতে হলদি নদীতে জল অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। ঢেউ উঠছে। নদীর ধারে যে বসার জায়গাগুলি ছিলো তা ডুবে গিয়েছে।আমফান এখন দিঘা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে। ওড়িশার পারাদ্বীপ বন্দর থেকে তার দূরত্ব এখন ১১৫ কিলোমিটার। ফলে পারাদ্বীপে প্রায় ১০৬ কিলোমিটার বেগে ঝড়শুরু হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি। ওড়িশার উপকূলবর্তী অঞ্চল জুড়েই ঝড় হচ্ছে। পুরীতে ঝড়ের বেগ প্রায় ৪০ কিলোমিটার। গোপালপুরে ৩০ কিলোমিটার। আমপান যত কাছে আসবে ততই হাওয়ার গতিবেগ বাড়বে। হচ্ছেও তাই। মঙ্গলবার রাতের তুলনায় বুধবার সকালে ঝড় ও বৃষ্টি দুইয়ের তীব্রতা অনেকটা বেড়েছে।
কলকাতাতেও সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে। বুধবার সকালেও বৃষ্টি হচ্ছে। হাওয়া বইছে। তবে ঝড় এখনও শুরু হয়নি। পাড়ায় পাড়ায় পুলিশ ঘোষণা করছে, কেউ যেন বাড়ির বাইরে না যান। কলকাতা বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে থাকা দশটি ছোট বিমান রাঁচি, গুয়াহাটি ও বারাণসীতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ, আশঙ্কা ছিলো, তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে ওই বিমান উড়ে যেতে পারে। বড় বিমানগুলি রাখা আছে। সেগুলি খুব ভারি বলে ঝড়ের তাণ্ডবেও কিছু হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এর থেকে অনেক বড় ক্ষতির আশঙ্কা থাকছে মেদিনীপুর থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায়। সেখানে আশঙ্কা নদী বাঁধ নিয়ে। বহু অনেক বাঁধের অবস্থা খারাপ। দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বাঁধ ভেঙে নদীর জল ঢুকে পড়বে বিস্তীর্ণ এলাকায়। মেদিনীপুরে সারারাত ধরে জরুরি ভিত্তিতে কিছু বাঁধ মেরামতিহয়েছে। সিপিএম নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি সহ সুন্দরবনে কাজ করেছেন এবং এখনও করছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ১৪০ কিলোমিটার হলে অন্তত ১০০০ কিলোমিটারের বাঁধ ভাঙবে। বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে। তখন পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হবে। আমি রায়দিঘিতে হাজার খানেক লোককে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে এসেছি। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বলেছি, সব ধরনের সাহায্য করতে চাই।''
বিজ্ঞাপন
আমফান তার গতিও ক্রমশ বাড়াচ্ছে। আগে তা ঘণ্টায় ১৪ তেকে ১৫ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসছিলো। এখন তার গতিবেগ আরও বেড়েছে। সেই কারণে বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে তা দিঘায় চলে আসতে পারে। তার আগেই তা পারাদ্বীপের পাশে পৌঁছে যাবে। আগের শক্তি কিছুটা হারালেও আমফান এখনও অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসাবেই আছে। দিঘা ও সুন্দরবনের ওপরে তা ১৩৫ থেকে ১৫৫ কিলোমিটার গতিতে আছড়ে পড়তে পারে। সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১৮৫ কিলোমিটার। এমনকী, কলকাতাতেও ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হবে বলে জানানো হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন