করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়ানোর পর থেকে কোভিড-১৯-এর জীবাণু কারো শরীরে আছে কিনা তা নির্ণয় করার জন্য যথেষ্টভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে বিশ্বের বহু দেশে বিভিন্ন মহল থেকে নানা অভিযোগ রয়েছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কোভিড-১৯ পরীক্ষার ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের কৌশল ব্যবহার করেছে।
চীনে যেখান থেকে এই ভাইরাসের সূত্রপাত, সেখানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া সেখানে সংক্রমণ শুরু হবার পর থেকেই দ্রুত সাধারণ মানুষের শরীরে পরীক্ষা চালিয়েছে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে পরীক্ষার ব্যাপারে সবচেয়ে এগিয়ে জার্মানি। ব্রিটেনের সরকার যত সংখ্যক মানুষকে পরীক্ষা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পূরণ করতে পারেনি।
বাংলাদেশ এবং ভারতেও যথেষ্ট পরীক্ষা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে বাংলাদেশে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে গত সপ্তাহে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সারা দেশে ৪,০১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
কীভাবে পরীক্ষা করা হয়?
হাসপাতালগুলোতে যে পরীক্ষা পদ্ধতি বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে সেখানে দেখা হচ্ছে কার শরীরে কোভিড-১৯-এর জীবাণু রয়েছে।
এতে নাক ও গলার ভেতর থেকে নমুনা নেয়া হচ্ছে এবং তারপর সেই নমুনা পাঠানো হচ্ছে গবেষণাগারে দেখার জন্য যে এই ভাইরাসের যে জেনেটিক গঠন তার কোন লক্ষণ ওই নমুনার মধ্যে রয়েছে কিনা।
এই পরীক্ষার ফল জানতে কয়েকদিন সময় লাগে।
এছাড়া ব্রিটিশ সরকার আরও একটি পরীক্ষা শুরু করতে আগ্রহী। সেটি হল অ্যান্টিবডি পরীক্ষা।
এই পরীক্ষায় দেখা হবে কারো শরীরে ইতোমধ্যেই এই ভাইরাস রয়েছে কিনা। অর্থাৎ দেখা হবে কারো শরীরে এই রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়েছে কিনা।
একটি যন্ত্রের মধ্যে এক ফোঁটা রক্ত নিয়ে এই পরীক্ষা চালানো হয়।
এই পরীক্ষার ফল জানা যায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। এতে ওই এক ফোঁটা রক্ত যন্ত্রে থাকা একটি তরল রাসায়নিকের সঙ্গে মেশানো হয় এবং এই পরীক্ষা বলে দেয় কারো শরীরে এই ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি আছে কিনা।
এই পরীক্ষায় ধরা পড়ে কারো ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল কিনা।
এই পরীক্ষাগুলো কতটা নির্ভরযোগ্য?
বিবিসির স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদদাতা রেচেল স্ক্রেরিয়ার বলছেন হাসপাতালগুলোতে যেসব পরীক্ষা চালানো হচ্ছে সেগুলো খুবই নির্ভরযোগ্য।
কিন্তু তিনি লিখছেন এর মানে এই নয় যে এই পরীক্ষা থেকে করোনাভাইরাসের প্রত্যেকটি কেস ধরা পড়বে। কোন রোগীর নমুনা যদি সংক্রমণ ঘটার একেবারে গোড়ার দিকে নেয়া হয়ে থাকে অথবা যদি কারো সংক্রমণের মাত্রা খুব কম থাকে, তাহলে তার পরীক্ষার ফল 'নেগেটিভ' আসতে পারে।
অথবা গলার ভেতর থেকে নমুনা নেবার সময় যদি ওই লালায় যথেষ্ট পরিমাণ ভাইরাস না থাকে তাহলেও পরীক্ষার ফল 'নেগেটিভ' আসতে পারে।
এখনও পর্যন্ত অ্যান্টিবডি পরীক্ষাকে খুব নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে না।
ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন অ্যান্টিবডি পরীক্ষার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য যে পরীক্ষাগুলো আছে, তার মধ্যে ১৫টি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। কিন্তু এর কোনটাই তারা খুব নির্ভরযোগ্য মনে করছেন না।
অধ্যাপক জন নিউটন, যিনি ব্রিটেনে পরীক্ষার বিষয়টি সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধান করছেন, তিনি দ্য টাইমস সংবাদপত্রকে বলেছেন চীন থেকে যে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কিটগুলো কেনা হয়েছে, তাতে যেসব রোগী করোনাভাইরাসে গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের শরীরে পরীক্ষায় অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। কিন্তু যাদের মধ্যে অল্প উপসর্গ দেখা গিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষায় তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।
ব্রিটিশ সরকার ৩৫ লাখ অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কিট কিনেছিল দেখার জন্য কত লোক দেশটিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিল। সেটা জানা গেলে তারা এই তথ্য পেত যে ব্রিটেনে কত মানুষের এই ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু দেশটির সরকার বলছে এই পরীক্ষার ফলাফল নির্ভরযোগ্য না হওয়া পর্যন্ত তারা এই পরীক্ষা চালাবে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন