দীর্ঘদিন থেকেই লন্ডনের বাসিন্দা তিনি। পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন জন্মভূমি বাংলাদেশে। তখনও স্বাভাবিক ছিল চারদিকের পরিবেশ-পরিস্থিতি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী বিস্তারে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দ্রুতই জেঁকে বসলো ভীতির পরিবেশ। এ সময় প্রবাসীদের দেশে ফেরা নিয়ে সমালোচনামুখর হয়ে উঠলো দেশের মানুষ। ঠিক তখনই উল্টো স্রোতে সাঁতার কাটলেন তিনি। পরিবার পরিজন দেশে রেখে মাত্র তিন সপ্তাহ আগে ফিরলেন লন্ডনে। ফিরেই পড়লেন করোনার খপ্পরে।
শরীরে করোনার লক্ষণ প্রকাশ পাবার পর থেকে বন্দি জীবন শুরু হয়েছে হোম কোয়ারেন্টিনে। ঘরে অবস্থান করেই নিচ্ছেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা। জ্বর, সর্দি-কাশি আর শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি মৃত্যু ভয়ের সঙ্গে লড়াই করছেন সমানে। কিন্তু আত্মীয়-স্বজনদের কাছে সে কথা প্রকাশ করেননি তিনি। এমনকি দেশে অবস্থানরত পরিবারের সদস্যরাও জানেন না তিনি একাকী-নি:সঙ্গ অবস্থায় করোনার সঙ্গে জীবন রক্ষার যুদ্ধ করছেন। বিষয়টি জানেন কেবল কয়েকজন ঘনিষ্ঠজন। তাদেরই একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন তার কথা। সেখানে প্রকাশ করা হয়নি ভুক্তভোগীর নাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা সে পোস্টে তিনি লিখেছেন-‘অসহায়ত্বের রকমফের একেক জায়গায় একেকরকম। বাংলাদেশের মতো জায়গায় এই শংকিত পরিস্থিতিতে অনেকে টাকার অভাবে দুমুঠো ভাত জোগাড় করতে পারছেন না অনেকে। অন্যদিকে ইউরোপের মতো উন্নত দেশে টাকা-পয়সা থাকা সত্ত্বেও শারীরিক অক্ষমতা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে অসহায় অনেক মানুষ। লন্ডনে বাংলাদেশী এক মধ্যবয়স্ক ভাই দুই সপ্তাহ ধরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। তিনি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন তিন সপ্তাহ আগে। পরিবার এখন রয়েছে বাংলাদেশে। ঘরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। গত সপ্তাহে টিম:৭-এর সদস্যরা তাকে জরুরি ওষুধ দিয়ে এসেছিলো। আলহামদুলিল্লাহ। তার অবস্থা অনেক উন্নতির দিকে। তার পরিবার আত্মীয় স্বজন জানেন না তিনি করোনা আক্রান্ত। তিনি চাননা কেউ জানুক। শনিবার তিনি আমাদের টিম:৭-এর সদস্য বাবর চৌধুরীকে টেক্সট করে বললেন- ভাই, আজ অনেকদিন দেশি খাবার খাইনা, আমার জন্য যদি পারেন কাউকে দিয়ে রান্না করে আমাকে সামান্য ভাত-তরকারি দিয়ে যান, আমি আপনাকে টাকা দিয়ে দেবো। বাবর উনাকে বললো- ভাই, আপনাকে টাকা দেয়া লাগবে না। আপনার কি খেতে ইচ্ছে করছে বলুন। অনেক জোরাজৃরিতে তিনি কি খেতে চান বললেন। বাবর তার ঘরে ভদ্রলোকের পছন্দের খাবার রান্না করে তাকে দিয়ে এলো। ভদ্রলোক ধন্যবাদ জানিয়ে কাল থেকে ক্রমাগত মেসেজ দিয়ে যাচ্ছেন। এই ছবিটি তিনি নিজে তুলে পাঠিয়েছেন। বাবরকে অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ তার মঙ্গল করুক। এভাবে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর শক্তি, সাহস ও মনোবল দিন। আমিন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন