মানুষের মাথার উকুন মারার ওষুধেই নাকি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ঠেকানো যাবে, দাবি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের একদল গবেষক। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাধারণভাবে ব্যবহৃত একধরনের অ্যান্টি প্যারাসিটিক ওষুধ পাওয়া গেছে। যেটি ব্যবহারে গবেষণাগারে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তারা ভাইরাসটিকে মেরে ফেলতে পেরেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথ এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে প্রচলিত উকুন মারার ওষুধে ‘আইভারমেক্টিন’র উচ্চমাত্রার ব্যবহার মানুষের কোষে বাড়তে থাকা করোনাভাইরাসের বৃদ্ধি থামাতে পারে। প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, আইভারমেক্টিন করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি রোধ করে দেয়। তবে এটি মানুষের মধ্যে পুরোমাত্রায় কার্যকর কি না এবং কী পরিমাণে প্রয়োগ নিরাপদ, তা এখনো গবেষকেরা নির্ণয় করতে পারেননি।
গবেষকরা বলছেন, পরবর্তী পদক্ষেপটি হলো সঠিক প্রয়োগ ও পরিমাণ নির্ধারণ করা এবং সেটি মানুষের জন্য নিরাপদ কি না, তা নিশ্চিত করা।
গবেষণাটি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোনাশ বায়োমেডিসিন ডিসকভারি ইনস্টিটিউট ও পিটার দোর্টি ইনস্টিটিউট অব ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনিটি যৌথভাবে করেছে। গবেষণাটির নেতৃত্বে রয়েছেন মোনাশ বায়োমেডিসিন ডিসকভারি ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক কাইলি ওয়াগস্টাফ।
গবেষণার ব্যাপারে কাইলি ওয়াগস্টাফ বলেন, বর্তমান ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। কারণ, ওই ওষুধটি এর আগে মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং যুক্তিযুক্তভাবে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায়ও রয়েছে। সাধারণ ভাষায় এই ওষুধটি কয়েক বছর ধরে সারা বিশ্বজুড়ে মাথার উকুন এবং স্ক্যাবিস ধরনের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত ওষুধ, যদি প্রাকক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় পর্যাপ্ত কার্যকারিতা পাওয়া যায়, তবে এটিকে সরাসরি মানুষের মধ্যে নিয়ে যাওয়া যাবে। এখন কেবল কার্যকারিতা খোঁজা হচ্ছে। যদি আইভারমেক্টিন নামের ওষুধটি কার্যকর প্রমাণিত হয়, তবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত এটি দ্রুত ব্যবহার করা যাবে।
এটি অবশ্যই বিবেচনা করার মতো। সতর্কভাবে এগোতে হবে। এখন প্রাক-ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য তহবিল প্রয়োজন বলেও জানান অস্ট্রেলিয়ার এ গবেষক।
এ ছাড়া গবেষণাগারে আইভারমেক্টিন নামের ওষুধটি এইচআইভি, ডেঙ্গু ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে এই গবেষণায় জড়িত গবেষকদের কাজের প্রশংসা করার সময় অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনি মিকাকোস এই ওষুধটির অপব্যবহার না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শিশুদের চুলের উকুনের চিকিৎসা ছাড়া এই ওষুধ এখনই কেউ কিনবেন না। কারণ, আমরা দেখেছি, বিদেশে কিছু লোক কিছু ওষুধের কথা শুনেই সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত উপায়ে ব্যবহার করে মারা গেছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন