ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ২৭ মার্চ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তার এক সপ্তাহের মাথায় বরিস জনসনের অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। খবর দ্য ডেইলি মেইল।
ব্রিটেনের দ্য ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মি. জনসনের বান্ধবী কেরি সাইমন্ডস রবিবার (৫ এপ্রিল) নিজের টুইটারে জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত সাতদিন ধরে তিনি বাসায় কোয়ারেন্টিনে (বিচ্ছিন্ন) আছেন।
বরিস জনসন ২৭ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আইসোলেশনে রয়েছেন। এর মধ্যেই ৩২ বছর বয়সী কেরি সাইমন্ডস এক সপ্তাহ আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু সেটা আজ (৫ এপ্রিল) তিনি জানান টুইটারের মাধ্যমে। টুইটারে তিনি লিখেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে আমি করোনা ভাইরাসের মূল উপসর্গ নিয়ে বিছানায় আছি। তবে আমার পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। এক সপ্তাহ বিশ্রাম নেয়ার পর আমি শক্তি ফিরে পাচ্ছি এবং শরীরও অনেকটা সেরে উঠেছে।’
মাত্র মাস খানেক আগেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ঘোষণা দিয়েছিলেন, খুব শিগগিরই অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবী কেরি সাইমন্ডসকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন। কিন্তু এক সপ্তাহের ব্যবধানে এখন সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে।
পাঁচ সপ্তাহ আগে কেরি সাইমন্ডস এবং বরিস জনসন ঘোষণা দেন, তারা বাবা-মা হতে যাচ্ছেন এবং এই গ্রীষ্মেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস এখন সব কিছু অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিল তাদের।
এ ব্যাপারে মিজ কেরি টুইটে লিখেন, ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কারণে কভিড-১৯ নিয়ে খুবই দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে। অন্যসব অন্তঃসত্ত্বা নারীদের আমি বলবো, আপনার সর্বশেষ আপডেট করা প্রতিটি গাইডলাইন অনুরসরণ করে চলার চেষ্টা করবেন। যেটা আমি পেয়েছি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে।’
ব্রিটেনের প্রধান মেডিকেল অফিসার ক্রিস হুইটির মতে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা খুব ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যান।
এদিকে করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্য। অবস্থা দিনদিন অবনতি হচ্ছে। ক্রমেই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৭০৮ জন। যা এ যাবৎ দেশটিতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে মোট মারা গেল ৪ হাজার ৩১৩ জন।
যুক্তরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছুঁই ছুঁই করছে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ হাজার ৯০৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৭৩৫ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১৩৫ জন।
এছাড়া যুক্তরাজ্যে বর্তমানে ৩৭ হাজার ৪৫৫ জন আক্রান্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৭ হাজার ২৯২ জন চিকিৎসাধীন, যাদের অবস্থা স্থিতিশীল। বাকি ১৬৩ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৮০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৬৯১ জন।
এছাড়া বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৮৪ হাজার ৮০০ জন। যা একদিনে আক্রান্তের সংখ্যায় সর্বোচ্চ। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১২ লাখ ১ হাজার ৪৭৬ জন। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৪৬ হাজার ২৫৮ জন সুস্থ হয়েছে।
সবমিলিয়ে, বর্তমানে ৮ লাখ ৯০ হাজার ৩১৮ জন আক্রান্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ লাখ ৪৮ হাজার ৩০ জন চিকিৎসাধীন, যাদের অবস্থা স্থিতিশীল। আর ৪২ হাজার ২৮৮ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছে।
ভাইরাসটি চীন থেকে ছড়ালেও বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ১১ হাজার ৩৫৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৪৫২ জনের। ইতালিতে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৩২ জন আক্রান্ত, বিপরীতে মারা গেছে ১৫ হাজার ৩৬২ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে এবং আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে।
এছাড়া স্পেনে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ১৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর ১১ হাজার ৯৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। জার্মানিতে ৯৬ হাজার ৯২ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১ হাজার ৪৪৪। চীনে আক্রান্ত ৮১ হাজার ৬৬৯, মৃত্যু ৩ হাজার ৩২৯। ফ্রান্সে আক্রান্ত ৮৯ হাজার ৯৫৩, মৃত্যু ৭ হাজার ৫৬০। ইরানে আক্রান্ত ৫৫ হাজার ৭৪৩, মৃত্যু ৩ হাজার ৪৫২। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৪১ হাজার ৯০৩, মৃত্যু ৪ হাজার ৩১৩ জন।
এছাড়া ভারতে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৮৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর প্রাণ গেছে ৯৯ জনের। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৮১৮ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৪১ জন মারা গেছে। বাংলাদেশে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৭০ জন আক্রান্ত হয়েছে বিপরীতে প্রাণ গেছে ৮ জনের।
এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন