করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া রোগী ও চিকিৎসাকর্মীদের স্মরণে শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে চীন। নিহতদের শহীদ আখ্যা দিয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে শনিবার দেশজুড়ে পতাকা অর্ধনমিত রাখার পাশাপাশি সব ধরনের বিনোদন কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
এমন এক দিন এই শোকের আয়োজন করা হয়েছে, যখন দেশটির বার্ষিক কুইংমিং উৎসব উদযাপন শুরু হয়েছে। প্রতিবছর এদিন লাখ লাখ চীনা নাগরিক তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের প্রতি শোক জানিয়ে বেইজিংয়ের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় তিন মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়।
জংনানহাইতে জাতীয় পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও অন্যান্য চীনা নেতৃবৃন্দ। এছাড়া এ সময়ে নাগরিকরা গাড়ি, ট্রেন, জাহাজ থামিয়ে হর্ন বাজিয়ে শোক প্রকাশ করেন।
হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে উদ্ভূত ভাইরাসটিতে চীনের মূলভূখণ্ডে ৩৩ হাজারের বেশি লোক মারা গেছেন। করোনা রোগীদের বাঁচাতে সামনে থেকে লড়াই করা শু নামের এক নার্স বলেন, আমাদের যেসব সহকর্মী ও রোগী মারা গেছেন, তাদের জন্য দুঃখবোধ করছি। আশা রাখছি, তারা স্বর্গে ভালো আছেন।
সকাল ১০টায় উহানের শহর এলাকায় সব ট্রাফিক লাইটে লাল আলো জ্বলে উঠে। আর রাস্তার যান চলাচল তিন মিনিটের জন্য বিরতি দেয়া হয়। এক কোটি ১০ লাখ লোকের উহানে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই হাজার ৫৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদের মধ্যে তরুণ চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াংও আছেন, যিনি প্রথম সহকর্মীদের নতুন একটি ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। তার সতর্কবার্তায় প্রশাসন প্রথম দিকে গা করেনি; উল্টো গুজব রটনাকারী অ্যাখ্যা দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল।
সেই ভাইরাস এরপর চীনের গণ্ডি পেরিয়ে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ১১ লাখ, মৃত্যু ৫৯ হাজার ছুঁইছুঁই।
আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে টপকে গেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি।
করোনাভাইরাসে মৃতদের স্মরণ করতে উহানে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব কবরস্থানে টম্ব-সুইপিং ফেস্টিভালের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। চীনা ক্যালেন্ডারে এ সময় লাখ লাখ মানুষ এসব কবরস্থানে ছুটে আসে, ফুল দিয়ে স্মরণ করে নিজেদের পূর্বসূরিদের।
লকডাউনের কারণে শহরটির ঘরবন্দি বাসিন্দাদের অনেককে ফুটপাত ও বাড়ির আশপাশে ঐতিহ্যবাহী জস কাগজ পোড়াতে দেখা গেছে। এর মাধ্যমে মৃতদের কাছে সম্পদ ও অর্থ পাঠানো যায় বলে বিশ্বাস চীনাদের।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন