করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সিঙ্গাপুরে একমাসের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরি সেবা ছাড়া স্কুলসহ অধিকাংশ কর্মস্থল একমাসের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। শুক্রবার সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং এ ঘোষণা দেন। খবর রয়টার্স।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে আগামী ৭ এপ্রিল থেকে এ লকডাউন শুরু হবে। তবে স্কুল বন্ধ হলেও অনলাইনে ক্লাস শুরু হবে ৮ এপ্রিল থেকে।
লকডাউনের সময়টিতে সিঙ্গাপুরে চালু থাকবে খাদ্য সরবরাহ, বাজার, সুপারমার্কেট, ক্লিনিক, হাসপাতাল, পরিবহন এবং ব্যাংক। দেশে এই সময়ে এমনকি এর পরবর্তী সময়ের জন্যও পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ রয়েছে বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
লকডাউনের সময় লোকজনকে বাড়িতে থাকা এবং সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন লি সিয়েন লুং। তিনি বলেন, শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্যই বের হওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না; তবুও ভাইরাসটি অন্যের মধ্যে ছড়ায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে রবিবার থেকে সার্জিক্যাল মাস্ক বিতরণ করা হবে।
এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ১ হাজার ১১৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। আর শুক্রবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৬৫ জন।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসে পুরো বিশ্ব নীরব, নিস্তব্ধ। বিশ্ব গ্রাম ধারণায় যেখানে রাত-দিনের পার্থক্য করাই দুষ্কর ছিল, সেখানে সমগ্র বিশ্বই ঘরবন্দি। চারদিক সুনসান, জনশূন্য। যেন পৃথিবী আজ এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বাস করা কষ্টসাধ্য হলেও বিশ্বজুড়ে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৯৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা এ যাবৎ একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ১৪১ জন।
এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৮২ হাজার ৯৪১ জন। এটিও একদিনে আক্রান্তের সংখ্যায় সর্বোচ্চ। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৬ জন। এ পর্যন্ত ২ লাখ ২৮ হাজার ৪০৫ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন।
সবমিলিয়ে, বর্তমানে ৮ লাখ ১০ হাজার ৪৬০ জন আক্রান্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ লাখ ৭১ হাজার ২১ জন চিকিৎসাধীন, যাদের অবস্থা স্থিতিশীল। আর ৩৯ হাজার ৪৩৯ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছে।
ভাইরাসটি চীন থেকে ছড়ালেও বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৭৭ হাজার ১৬১ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৩৯২ জনের। ইতালিতে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৭ জন আক্রান্ত হয়েছে, বিপরীতে মারা গেছে ১৪ হাজার ৬৮১ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে এবং আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে।
এছাড়া স্পেনে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার ১৯৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর ১১ হাজার ১৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। জার্মানিতে ৯১ হাজার ১৫৯ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১ হাজার ২৭৫। চীনে আক্রান্ত ৮১ হাজার ৬২০, মৃত্যু ৩ হাজার ৩২২। ফ্রান্সে আক্রান্ত ৬৪ হাজার ৩৩৮, মৃত্যু ৬ হাজার ৫০৭। ইরানে আক্রান্ত ৫৩ হাজার ১৮৩, মৃত্যু ৩ হাজার ২৯৪। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৩৮ হাজার ১৬৮, মৃত্যু ৩ হাজার ৬০৫ জন।
এছাড়া ভারতে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর প্রাণ গেছে ৭২ জনের। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৮৬ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৪৬ জন মারা গেছে। বাংলাদেশে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৬১ জন আক্রান্ত হয়েছে বিপরীতে প্রাণ গেছে ৬ জনের।
এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন