বাড়িতে জায়গা সংকট। তাই করোনা মোকাবিলায় দূরত্ব বজায় রাখতে নৌকাতেই দিন কাটাচ্ছেন ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ। গোসল থেকে শুরু করে রাত্রিযাপন এই নৌকাতেই করছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের মালদার হাবিবপুরের কীর্তনিয়া নিরঞ্জন হালদার নামে ওই বৃদ্ধ ৪ দিন আগে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। অন্য জেলা থেকে আসায় গ্রামবাসীদের দাবি মতো স্বাস্থ্যপরীক্ষা করান নিরাঞ্জন। তারপর তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু আত্মীয়ের বাড়িতে বাড়তি ঘর না থাকায় নদীতে নৌকায় থাকতে শুরু করেন তিনি।
জানা গেছে, আত্মীয়ের বাড়িতে মাত্র দুটি ভাঙাচোরা টিনের ঘর রয়েছে। ফলে সেই বাড়িতে থেকে দূরত্ব-বিধি মেনে চলা সম্ভব ছিল না নিরঞ্জনের। তাই শেষে ঠাঁই নিতে হয়েছে আত্মীয়ের বাড়ির পাশে বাঁধা নৌকায়।
নিরঞ্জনের ভাষায়, ভাগ্নির বাড়িতে থাকার জায়গা নেই। আমি সেখানে থাকলে ছেলেমেয়েকে নিয়ে ওদের বাইরে থাকতে হবে। তাই নৌকায় বসবাস শুরু করেছি।
এদিকে করোনা ভাইরাসে (কভিড-১৯) ভারতে দিনদিন পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮ জন।
দেশটিতে করোনায় নতুন করে ৬০১ জন সহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৩২ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৪৮ জন। এছাড়া সেখানে বর্তমানে ১ হাজার ৮২৬ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে সবাই ভাল অবস্থায় রয়েছেন। এখনও কারও অবস্থা ক্রিটিকাল হয়নি।
ভারতের মুম্বাইয়ে এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি ধারাবিতে ৫৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তির করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছেন। ওই বস্তিতে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস করেন। মুম্বাইয়ের ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত ওই বস্তিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় ঝুঁকিতে রয়েছেন বিশাল সংখ্যক মানুষ। যদি সেখানে ব্যাপক আকারে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এর আগে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ ভারতজুড়ে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেন মোদী।
এ ঘোষণার পর ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় ভারতে সব ধরনের গণপরিবহন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান, জিম, সুইমিংপুল, পার্ক, অফিস-আদালত।
দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় কাজের সন্ধানে গ্রাম থেকে বড় বড় শহরগুলোতে উঠে আসা লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেকেই অর্থাভাবে এখন তিনবেলা খেতেও পারছে না। রাজ্য সরকারগুলো এই দিনমুজুরদের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের ঘোষণা দিলেও এখনও তা মানুষের হাতে পৌঁছুচ্ছে না।
অনেক শ্রমিক উপায় না পেয়ে পরিস্থিতির চাপে পায়ে হেটেই দূরবর্তী গ্রাম বা ছোট শহরগুলোতে বাড়ির পথে রওনা দিচ্ছে। এভাবে মালপত্র ও ছোট ছোট বাচ্চাদের কোলে-কাঁধে তুলে শত শত মাইল পথ পাড়ি দেয়ার সংগ্রামে যুক্ত হয়েছে দেশটির লাখ লাখ নিম্নবিত্ত মানুষ।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৮৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা এ যাবৎ একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ১৯২।
এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬ হাজার ৮৭২ জন। এটিও একদিনে আক্রান্তের সংখ্যায় সর্বোচ্চ। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ১৯৭ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৮৯ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন।
এছাড়া বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ৬ লাখ ৯৪ হাজার ২৩৮ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৭৬০ জনের অবস্থা সাধারণ। ৩৫ হাজার ৪৭৮ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছেন।
এদিকে করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ইতালি। ইতালিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩ হাজার ১৫৫ জন। স্পেনে মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ৩৮৭ জন। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ১০২ জনের। চীনে ৩ হাজার ৩১২ জন। ফ্রান্সে ৪ হাজার ৩২ জন। ইরানে ৩ হাজার ৩৬ জন। যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ৩৫২ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন