ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না এমন আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে বাকিংহাম প্যালেসের পক্ষ থেকে এই খবর নিশ্চিত করা হয়েছে যে, রানির শরীর খুব ভালো আছে।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের করোনা পজিটিভ হওয়ার পর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের করোনায় আক্রান্তের সম্ভাবনা নিয়ে এমন গুঞ্জন ওঠে। কারণ, প্রতি সপ্তাহেই রানির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী জনসন।
বাকিংহাম প্যালেস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ১১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জনসনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করেছিলেন রানি। ওই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে যে, করোনায় আক্রান্ত হলেও রানির স্বাস্থ্য ভালো ও স্থিতিশীল রয়েছে। তার শরীরে করোনার লক্ষণ তেমন গুরুতর নয়।
এর আগে ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লসও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বেশ কিছু রাজকীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন প্রিন্স অব ওয়েলস। এসব অনুষ্ঠান থেকে কোনওভাবে তার শরীরে করোনার সংক্রমণ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজকীয় দায়িত্বের অংশ হিসেবেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হয় প্রিন্স চার্লসকে। রাজপরিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রিন্স চার্লস স্ত্রী ডাচেস অব কর্নওয়ালকে নিয়ে স্কটল্যান্ডে আইসোলেশনে আছেন। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
অপরদিকে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ক্রিস হুইটির শরীরেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তার করোনায় আক্রান্তের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত না হলেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তিনি নিজেই সাতদিনের সেলফ আইসোলেশনে রয়েছেন।
দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও বেশি উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে।
করোনা ভাইরাসে ব্রিটেনে মৃত্যু বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫৯ জনে।
এছাড়া করোনা ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৮৮৫ জনসহ মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৫৪৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন মাত্র ১৩৫ জন।
ব্রিটেনে বর্তমানে ১৩ হাজার ৬৪৯ জন আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৩ হাজার ৪৮৬ জনের অবস্থা সাধারণ। বাকি ১৬৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, চীন থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। সেখানে ভাইরাসটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও অন্যান্য দেশে বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭২৩ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৫ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ হাজার ৪৮৬ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৩৪০ জন। এছাড়া চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ১৫ হাজার ৩৮৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ২৭২ জন। এ নিয়ে করোনা ভাইরাসে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৭ হাজার ৩৪০ জনে। এর মধ্যে চীনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ২৯২। চীনের বাইরে মারা গেছে ২৪ হাজার ৪৮ জন।
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৬ জন আক্রান্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪ লাখ ১২ হাজার ৪৯৩ জনের অবস্থা সাধারণ। বাকি ২৩ হাজার ৫২৩ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছেন।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রেয়াসুস অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারগুলো এই বৈশ্বিক মহামারি ঠেকাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি সরকারগুলোকে নিজ নিজ দেশের করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
করোনা ভাইরাস পৃথিবীজুড়ে অদ্ভুত এক আঁধারের ছায়া নিয়ে এসেছে। চারিদিক নিরব, নিস্তব্ধ। কেউ কারও সাথে মিশছে না বা চাইছে না। যেন সবাই সবাইকে এড়িয়ে যেতে পারলেই বাঁচে। ‘বিশ্ব গ্রাম’ ধারণায় মানুষ অনেক বছর ধরেই একাকি জীবনের অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল। কিন্তু এতটা একাকি হয়তো তারা কখনোই হয়নি। যে চাইলেও তারা একে অন্যের সাথে দেখা করতে পারবে না। সবাই যেন এক যুদ্ধ কেন্দ্রীক জরুরি অবস্থায় রয়েছে।
এক করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বকেই যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে। অধিকাংশ দেশেই রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, শপিংমল-মার্কেট, রেস্তোরাঁ-বার ফাঁকা। যেন সব ভূতুড়ে নগরী, যুদ্ধকালীন জরুরি অবস্থা চলছে। সবার মধ্যে ভয়, আতঙ্ক আর আশঙ্কা।
উহান, চীনের শিল্পোন্নত এই শহর থেকেই প্রথম করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ভাইরাসটি প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও চীনের বাইরে ব্যাপক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
চীনে উদ্ভূত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৯৯টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন